বিভিন্ন পণ্যের হাটের কথা সবারই জানা। কিন্তু পিঁপড়ার ডিমের হাটও যে আছে, সে কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। অবিশ্বাস্য হলেও এমনই একটি হাঁট বসে শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে। এ হাটে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পিঁপড়ার ডিম বেচাকেনা। নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতি উপজেলার প্রত্যন্ত রাংটিয়া ও বাঁকাকূড়া গ্রামে বসে পিঁপড়ার ডিমের হাট। এই হাটে আসেন নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী উপজেলা, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জের পিঁপড়ার ডিম বিক্রেতারা। গারো পাহাড়ের শাল-গজারি বন এলাকা থেকে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে প্রতিদিন বিকেলের মধ্যে হাটে আসেন তারা। সন্ধ্যা নেমে এলেই ১ হাজার টাকা কেজি দরে এই ডিম কিনে নেন পাইকাররা। পরে এসব ডিম দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকেন তারা। তবে সারা বছর পাওয়া যায় না পিঁপড়ার ডিম। শীত ও বর্ষার সময় মূলত এক শ্রেণির লাল বড় পিঁপড়া বনাঞ্চলের শাল-গজারি গাছের মগ ডালের পাতা ও গাছের খোরলের (গর্ত) মধ্যে বাসা তৈরি করে ডিম পেড়ে থাকে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহাড়ি শাল-গজারি বনে এবং আম, জাম, লিচুগাছসহ বিভিন্ন গাছ থেকে বাঁশের আগায় জাল দিয়ে ঠোঙা তৈরি করে এসব ডিম সংগ্রহ করা হয়। সারাদিন ঘুরে ৩০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন কেউ কেউ। রাংটিয়া পিঁপড়ার ডিমের হাট ছাড়াও পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহ করে থাকেন স্থানীয় পাইকাররা। পরে সেগুলো মৎস্য চাষিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন তারা। বাকাকূড়া গ্রামের ডিম সংগ্রহকারী ডেনিয়েল সাংমা বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহাড়-জঙ্গল ঘুরে ডিম সংগ্রহ করি। সারাদিন ঘুরে ৩০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারি। কেজিপ্রতি এক হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এতে আমার সংসার চলে।’ একই গ্রামের লালমিয়া ও জামাল উদ্দিন জানান, গাছ থেকে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করতে খুব কষ্ট হয় তাদের। সাপ-বিচ্ছু, মৌমাছি আর হাতির ভয় থাকে। তবুও টাকার জন্য এ কাজ করতে হয় তাদের। রাংটিয়া গ্রামের পাইকার অবিনাশ কোচ দাবি করেন, পাহাড়ে এখন কোনো কাজ নেই। তাই এই পাহাড়ি এলাকার প্রায় দুই শতাধিক অভাবী মানুষ এ পেশায় জড়িত হয়েছেন। শেরপুরের পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সভাপতি রফিক মজিদ জানান, প্রকৃতি বা জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা ঠিক নয়। এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়। গাছের মগ ডালের পিঁপড়ার ডিম বা পিঁপড়া বনের পাখ-পাখালির খাদ্য। তাদের খাদ্য ঘাটতি হলে পাখিদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি পিঁপড়ার ডিমের চাষ পদ্ধতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের পিঁপড়ার ডিম চাষ পদ্ধতির ওপর ট্রেনিং দেওয়া গেলে প্রকৃতির পিঁপড়ার বাসা ভাঙা বা ডিম সংগ্রহ করার কাজে যাবেন না তারা।’