তত্ত্ববধায়কের সরকারের দাবি পূরণ না হওযা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপিসহ মূলধারা দলগুলো। দ্বন্দ্বে আছে জাতীয় পার্টি । তারা নির্বাচনের অংশগ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে হ্যাঁ-না কিছুই বলেনি। অনেক রাজনৈতিক দল নিশ্চুপ রয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই আগামী নির্বাচন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনেক দল ও ব্যক্তি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তবে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বলা যায়, ক্ষমতাসীনদল একতরফা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। অন্যদিকে, একদফা দাবিতে বিএনপি অবরোধসহ আন্দোলন চলমান রেখেছে। তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ে আটচল্লিশ হরতালের ডাক দিয়েছে। বামদলগুলো তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে অর্ধদিবস হরতাল পালন করেছে। অন্যান্য বিরোধীদলগুলোও হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দেখা যাচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার পথে ধাবমান। যতই দিন যাবে, তা অবনতির দিকে যাবে বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচনী পরিবেশ আছে কিনা, বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট বিরোধীদলগুলোর সম্মতি এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত কিনা, তা কমিশনকে বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বেশ কয়েকবার বলেছেন, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। তারপরও কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিবেশে তফসিল ঘোষণা গণতান্ত্রিক বিশ্বে বিরল। বলা বাহুল্য, বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার বদনাম রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, আগামী দ্বাদশ নির্বাচনটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করা নিয়ে ব্যাপক চাপ রয়েছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো বারবার এ ব্যাপারে তাকিদ দিচ্ছে। তারা সরকার ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য করার কথা বলেছে। সরকার তা উড়িয়ে দিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনও হয়ে সে অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতি এখন এমন, আগামী নির্বাচনও আগের দুটি নির্বাচনের মতো হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা এবং চরম অর্থনৈতিক সংকটে আগের দুটি নির্বাচনের মতো আরেকটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দায় বহন করা কতদূর সম্ভব হবে, তা নিয়ে ঘোর সংশয় রয়েছে। দেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী, রফতানি বাণিজ্যে বড় অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলেছে। আরও শঙ্কামূলক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে দেশের রফতানিতে ধস নামতে পারে। গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের রফতানি প্রায় ৩৬ শতাংশ কমেছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে, যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে, পোশাক রফতানির প্রধান গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও আমদানি কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া দেশগুলো বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সহযোগিতা সংকুচিত করতে পারে। এদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই কমছে। গত এক সপ্তাহে ১১৮ কোটি ডলার কমেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান দিন দিন কমছে। এর প্রভাব আমদানি-রফতানিতে পড়েছে, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এসব কিছুর মূলে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার শঙ্কা। নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে দেশ এক ভয়াবহ সংকটে পড়বে। এ সংকট থেকে উত্তরণ সহজ হবে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও আগামী নির্বাচন সমঝোতা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু করার জন্য বরাবরই আমরা আহ্বান জানিয়ে আসছি। এক্ষেত্রে সংলাপের বিকল্প নেই। সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান অসম্ভব নয়। আমাদের বুঝতে হবে রাজনৈতিক ঐক্যমত ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না।