সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

ইসলামে নারীর পূর্ণাঙ্গ অধিকার

কাজী খবিরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

মানবসমাজ নারী-পুরুষের একটি সঙ্ঘবদ্ধ রূপ, আর নারীরা হলো সেই সমাজের ভারসাম্যের প্রতীক ও নিয়ন্ত্রণকারী চরিত্র। মানবসভ্যতার অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অন্ধকারে রেখে কোনো দিনই মানবজাতির উন্নতি সম্ভব না। এ জন্য সমাজে নারীদের সুষম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। আর সেই সুষম অধিকার প্রতিষ্ঠার ধারণা থেকেই জন্ম নেয় নারীবাদী চেতনা। লিবারেল নারীবাদীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পিতা, পুত্র ও স্বামীকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তারা মানবসমাজে পুরুষের অবস্থান এবং মর্যাদা অস্বীকার করে না। বাঙালিসমাজ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নারীদের বদ্ধ ঘরে কোণঠাসা করে রাখেনি। যদিও কিছু কিছু নারীবাদী ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ইসলামী মূল্যবোধ অনুসারে বাড়ির বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের অনুমতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই অনুমতি নেয়া শোষণ কিংবা পিতৃতান্ত্রিকতা নয়। এটি মূলত সম্মানের সাথে নারীদের নিরাপত্তা বিধানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। পারিবারিক প্রয়োজনে নারীকে বাড়ির বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। এ ছাড়া এটি প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়, ইসলামে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে নারীদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বি ত করা হয়েছে। খুবই দুঃখের বিষয়, একবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এসেও নারীরা সম্পত্তি বণ্টনসহ বিভিন্ন জায়গায় তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বি ত হচ্ছে। মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় এবং পারিবারিক ও সামাজিক কার্যকলাপ ধর্মীয় রীতিতে সম্পন্ন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ইসলাম ধর্মীয় রীতিনীতিকে দোষারোপ করা যুক্তিসম্মত মনে হতে পারে। কিন্তু আসলেই কী ইসলাম নারীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেয়নি?
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে, একজন নারী তার পিতা-মাতার সম্পত্তির ওয়ারিশ হওয়ার পাশাপাশি তার স্বামী ও সন্তানের সম্পত্তির ভাগিদার। যেই মর্যাদা ইসলামী শরিয়াহ আইনের মাধ্যমে একজন নারীকে দেয়া হয়েছে। তবুও কিছু প্রশ্ন থেকে যায় কেন ইসলাম ছেলে ও মেয়েকে পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার দেয়নি। কেন পিতা-মাতার সম্পত্তিতে একজন ছেলে একজন মেয়ের দ্বিগুণ পায়। ইসলামী শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব শুধুই একজন ছেলের ওপর বর্তায়। এখানে সে স্ত্রীর সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবে না। আবার বিয়ের সময় মেয়েরা তাদের স্বামী কর্তৃক দেনমোহর পান। কিন্তু ইসলামে স্বামী কিংবা তার পরিবারকে কোনো উৎকোচ দেয়ার বিধান নেই। সবদিক বিবেচনা করলে মেয়েদের মূলধন হ্রাস পায় না। ইসলামী বিধান অনুযায়ী মেয়েদের সম্পত্তির সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমাদের ভূখ-ের প্রাচীন সমাজব্যবস্থা দায়ী। ইসলাম ইনসাফ বা ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাসী। এখানে ইনসাফ হচ্ছে নারী ও পুরুষের মধ্যে সুষম বণ্টন। ধর্মীয় মূল্যবোধ নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে নয়; বরং সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। সর্বোপরি নারীবাদ ও পুরুষতন্ত্রের বাইরে গিয়ে উদার নৈতিকতা চর্চা করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। নারীবাদকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী না বানিয়ে ইসলামধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com