রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

বিশ্ব ইতিহাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি একটি বিরল ঘটনা : প্রধানমন্ত্রী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব ইতিহাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি একটি বিরল ঘটনা।
আগামীকাল পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অ লের দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোনো তৃতীয় পক্ষ বা বহিঃশক্তির মধ্যস্থতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক শান্তির দলিলটি স্বাক্ষরিত হয়। বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা।’
‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্বাক্ষরিত চুক্তি’ অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য জেলাসমূহের সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অ লের দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোনো তৃতীয় পক্ষ বা বহিঃশক্তির মধ্যস্থতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক শান্তির দলিলটি স্বাক্ষরিত হয়। বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অ লের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অ লে শান্তি ও উন্নয়নের ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক।
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম আধুনিকতার ছোঁয়া বিবর্জিত পশ্চাৎপদ পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন এবং পার্বত্যবাসীর জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আ লিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রীদের সমান সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা নেন। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালের জুন মাসে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহে পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন সংরক্ষণের নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, ’৭৫ পরবর্তী অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো পার্বত্য অ লের সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বাঙালি-পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। খুন, অত্যাচার-অবিচার, ভূমি জবরদখল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এ অ লকে আরো অস্থিতিশীল করে তোলে। বিএনপি-জামাত জোট সরকারও ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ঐতিহাসিক এই শান্তি চুক্তির চরম বিরোধিতা করে পার্বত্য অ লকে পুনরায় অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। এ অ লের শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের সেই হীন উদ্দেশ্য সফল হতে দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির আলোকে এ অ লের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আ লিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করেছি। এ অ লের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো ও মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সকল খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। আমরা গত বছর পার্বত্য অ লে একই দিনে ৪২টি সেতু উদ্বোধন করেছি। এ অ লের সকল বেইলী ব্রিজ অপসারণ করে নতুন সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছি। রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। ভূমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত ভূমি কমিশন কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলায় উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, পার্বত্য অ লের যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না সেসব এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ অব্যাহত রয়েছে। পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে এ অ লের নারী ও শিশুদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্যবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং গবেষণাসহ তাদের সাথে সমতল ভূমির জনগণের সেতুবন্ধন স্থাপনের লক্ষ্যে ঢাকার বেইলী রোডে প্রায় ২ একর জমির উপর একটি শৈল্পিক ও নান্দনিক কমপ্লেক্স ‘শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র’ নির্মাণ করা হয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের প্রসারে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে আজ পার্বত্য জেলাসমূহ পিছিয়ে পড়া কোনো জনপদ নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অ লের জনগণ সম-অংশীদার।
তিনি বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। আমি আশা করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অ লের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ “সোনার বাংলাদেশ” গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম অ লে শান্তি এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com