মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন ৫ টাকার নোটে মুদ্রিত নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ ভালুকায় কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ মেলান্দহে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান:চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন জলঢাকায় কৃষকদের ফসলি জমির ধান নষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র নেই তবুও চলছে ইট ভাটা ভোটারদের আস্থা চেয়ারম্যান প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এম মুইদুল ইসলামের উপর কালীগঞ্জে ৪ কোটি টাকার রাস্তায় নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ খাদ্য ও শস্য পণ্য উৎপাদন বাড়াতে পারলে,দেশের আর্থিক অগ্রগতি বাড়বে-এস এম শাহজাদা এমপি আবারও ‘আওয়ামী লীগের সাজানো বিষ্ফোরক মামলায়’ পিরোজপুর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব সহ যুগ্ম আহ্বায়ক-১ কারাগারে জগন্নাথপুরে মাদ্রাসার ফলাফল সন্তোষজনক জমে উঠছে পিরোজপুরে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা

হিদায়াতুল কুরআন

ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

আমি আমার বান্দার ওপর যা নাজিল করেছি, তার ব্যাপারে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে তোমরা সেটির অনুরূপ একটি সূরা তৈরি করে আনো; আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমাদের আর যেসব সমর্থক-সাহায্যকারীদের কথা তোমরা বলো, (এ কাজে সহযোগিতা করার জন্য) তাদেরকেও ডেকে নাও, যদি তোমরা তোমাদের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো। কিন্তু তোমরা যদি (কুরআনের অনুরূপ একটি সূরা) তৈরি করে আনতে না পারো, আর বাস্তব সত্য হচ্ছে এই যে, কখনোই তোমরা তা পারবে না; তবে তোমরা (জাহান্নামের) সে আগুনকে ভয় করো, মানুষ ও পাথর হবে যার জ্বালানি। সত্য প্রত্যাখ্যানকারী কাফিরদের জন্যই তাকে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। (সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৩-২৪)
মর্ম ও শিক্ষা
সূরা বাকারাহর প্রথমেই ঘোষণা করা হয়েছে, হিদায়াতদানকারী এ কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এর নির্ভুল ও সন্দেহাতীত হওয়ার ব্যাপারে যুক্তি পেশ করা হয়েছে এবং যারা এতে কোনো প্রকার সন্দেহ করে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কুরআন আল্লাহর নাজিলকৃত কিতাব : কুরআন আল্লাহর নাজিলকৃত কিতাব (আয়াত ২৩)। ইতঃপূর্বে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা এবং তাঁর ইবাদতের জন্যই মানুষের সৃষ্টি। আল্লাহর কিতাব কুরআনে সে ইবাদত তথা আল্লাহর আনুগত্যের বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে। এটিই হলো মানুষের জন্য কল্যাণকর জীবনাদর্শ। তা গ্রহণ ও অনুসরণ অবশ্য কর্তব্য।
কুরআনে কোনো সন্দেহ নেই : কুরআনকে যদি মানুষের জন্য কল্যাণকর জীবনাদর্শ হতে হয়, তাহলে তা হতে হবে সন্দেহাতীতভাবে অকাট্য সত্য (আয়াত ২৩)। সূরা বাকারাহর শুরুতেই বলা হয়েছে, এ কুরআনে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাতিলপন্থীরা নানা অজুহাতে এতে সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, যে ব্যাপারে ইতঃপূর্বে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এখানে তাদের সন্দেহের প্রেক্ষাপটে একটি চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে।
কুরআনের চ্যালেঞ্জ : এখানে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে, যারা মানুষকে কুরআন থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্য বলত যে, কুরআন হলো মানবরচিত একটি কিতাব (আয়াত ২৩)। যেমন, নজর ইবনে হারেস এরূপ বলেছিল। এখানে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা হয়েছে, তোমাদের কথা অনুযায়ী এ কুরআন যদি মানবরচিত হয়ে থাকে, তাহলে সাহিত্য ও কাব্যচর্চার উৎকর্ষতার এই যুগে তোমাদেরও তো সেটির মতো কিছু রচনা করার যোগ্যতা ও সক্ষমতা থাকা উচিত। সুতরাং তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের সমমনা সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে দেখো এবং এ কুরআনের ক্ষুদ্র একটি সূরার মতো একটি সূরা রচনা করে দেখাও। বলাবাহুল্য, তাদেরকে যখন এ চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়, তখন কুরআনে নাজিলকৃত ছোট ছোট সূরা তাদের সামনে ছিল। সুতরাং এ চ্যালেঞ্জের অর্থ দাঁড়ায় এই যে, তোমরা পারলে একটি অতি ক্ষুদ্র সূরার মতো কিছু রচনা করে দেখাও। কিন্তু তারা এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তার মতো কিছুইি রচনা করতে পারেনি। কুরআনের আরো কয়েক স্থানেই কুরআনের অনুরূপ কিছু রচনা করার জন্য তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মহানবী সা:-এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত কেউই সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সাহস পায়নি। সুতরাং কুরআন আল্লাহর কিতাব এবং নির্ভুল ও সন্দেহাতীত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ দ্বারা একই সাথে হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর নবুওয়তও প্রমাণিত হয়। কারণ নবী হলেই তাঁর ওপর আল্লাহর কাছ থেকে নির্ভুল ও সন্দেহাতীত কিতাব নাজিল হতে পারে।
কুরআন এক অনন্য সাধারণ মু’জিজা : কুরআন হলো শেষনবীর অন্যতম মু’জিজা (আয়াত ২৩)। উল্লেখ্য, প্রত্যেক নবীর জন্যই কোনো-না-কোনো মু’জিজা রয়েছে। মু’জিজা হলো মানুষের ক্ষমতার বাইরে কিছু করে দেখানো। শেষনবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মু’জিজা হলো কুরআন। কুরআনের সাহিত্যমান ও বিষয়বস্তু, কুরআনের বর্ণনাভঙ্গি ও রচনাশেলী এবং তার ভাষার প্রাঞ্জলতা এককথায় সর্বদিক বিচারে কুরআন এক অনন্য সাধারণ কিতাব। তখন ছিল আরবি কাব্য ও সাহিত্যের চরম উৎকর্ষের যুগ। সেকালে সাহিত্য অনুরাগের এমন অবস্থা ছিল যে, উন্নতমানের কবিতাগুলোকে কাবা শরিফের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা হতো, আর মানুষ তা উপভোগ করত। এমন পরিবেশেই কুরআন নাজিল হয় এবং এর সাহিত্যমান দেখে তৎকালীন আরবের বাঘা বাঘা কবি-সাহিত্যিক অভিভূত হয়ে পড়ে, হতবাক হয়ে যায়। শত চেষ্টা সত্ত্বেও তারা কুরআনের মতো উন্নত সাহিত্যমানের কিছু রচনা করতে পারেনি। শুধুই কি সাহিত্যমানের কথা? কুরআন প্রদত্ত কালোত্তীর্ণ কল্যাণকর আদর্শ, পরকালীন জীবনের বিশদ বিবরণ, অদৃশ্য জগতের অকাট্য সংবাদ, অসংখ্য অজানা ঐতিহাসিক তথ্য, মহাবিশ্বের অজানা অদেখা অগণিত বস্তুসম্ভারের সংবাদ, উন্নত নীতিনৈতিকতা, আদর্শ জীবন-দর্শন ও জীবনব্যবস্থা কি কুরআন ব্যতীত অন্য কোথায়ও পাওয়া যাবে? কোনো মানুষ বা মানবগোষ্ঠী এমন বিপুল অতুলনীয় তথ্যসমৃদ্ধ কোনো কিতাব কখনো রচনা করতে পেরেছে? না, কখনো কেউ তা পারেনি। সুতরাং শেষনবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মু’জিজা হলো মহাগ্রন্থ কুরআন।
সব বাতিলের একই দল : লক্ষণীয়, আলোচ্য আয়াতে বাতিলপন্থীদের চ্যালেঞ্জ দেয়ার সময় বলা হয়েছে, তোমরা তোমাদের সমর্থক-সাহায্যকারীদের এ কাজে ডেকে নাও (আয়াত ২৩)। তোমাদের সবার চরিত্র তো একই, যেহেতু তোমরা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করো এবং কুরআনকে প্রত্যাখ্যান করো। কাজেই তোমরা তো একই দলভুক্ত। সুতরাং সবাই মিলে চেষ্টা করে দেখো তো কুরআনের মতো কিছু একটা বানিয়ে আনতে পারো কি না। এখানে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, বাতিলপন্থীরা সবাই একই দলভুক্ত, সত্য-প্রত্যাখ্যানে তারা এক ও অভিন্ন। অন্যান্য ব্যাপারে তাদের মধ্যে মতভেদ ও দলাদলি থাকতে পারে; কিন্তু সত্য-প্রত্যাখ্যান ও বাতিল আদর্শের প্রশ্নে তারা সবাই এক। এ কারণেই দেখা যায়, কোনো সংঘর্ষ সৃষ্টি হলে অমুসলিম দেশগুলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে মিত্র শক্তি গঠন করে। তাই কুরআনে মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলা হয়েছে।
শিরকের বাতুলতার প্রমাণ ও চ্যালেঞ্জ : কুরআনের মতো কিছু রচনার চেষ্টায় যে সমর্থক-সাহায্যকারীর সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে, তাতে মুশরিকদের কাল্পনিক শরিকরাও অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহর ইবাদতের সাথে শরিক ধার্য করে, তারা তাদেরও সাহায্য নিক। সেসব শরিকের সাহায্য নিয়ে দেখুক, এমন কিছু রচনা করতে পারে কি না (আয়াত ২৪)। বলাবাহুল্য, তারা তাদের কাল্পনিক শরিকদেরকে এ কাজে পায়নি। অর্থাৎ তাদের কাল্পনিক শরিকরা হলো নিছক কল্পনা মাত্র। বাস্তবে আল্লাহর কোনো শরিক নেই।
কুরআনের সত্যতার আরেকটি প্রমাণ : ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন : আলোচ্য আয়াতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, বাতিলপন্থীরা কুরআনের মতো কিছু রচনা করতে পারবে না (আয়াত ২৪)। কুরআনের এ ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তারা আজ পর্যন্ত কিছু রচনা করে দেখাতে পারেনি। সুতরাং কুরআনের অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীর মতো এটিও সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি হলো কুরআনের সত্যতার প্রমাণ। বলাবাহুল্য, আল্লাহর কাছ থেকে কুরআন নাজিল হওয়ার প্রমাণ শেষনবীর নবুওয়তেরও প্রমাণ বটে, কারণ তিনি নবী না হলে তাঁর প্রতি আল্লাহর কিতাব নাজিল হতো না।
কুরআন প্রত্যাখ্যানকারীরা কাফির : কুরআন প্রত্যাখ্যানকারীরা কাফির, আর তাদের জন্য রয়েছে দোজখের শাস্তি; তারা হবে দোজখের আগুনের ইন্ধন (আয়াত ২৪)। গোটা কুরআনই আল্লাহর কিতাব এবং গোটা কুরআনকেই একসাথে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর কিতাবের ওপর আংশিক ঈমান, অথবা আংশিক কুরআনের প্রতি ঈমান আনার কোনো সুযোগ নেই। আর এ জন্যই বলা হয়েছে, ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশের ওপর ঈমান আনবে এবং কিছু অংশকে অস্বীকার করবে?’ বর্তমান মুসলিম সমাজে অনেকেই সালাত-সিয়ামের মতো আনুষ্ঠানিক ইবাদত ও ব্যক্তি-জীবনে কুরআনি অনুশাসন মেনে নেয়; কিন্তু সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিকসহ সামষ্টিক ক্ষেত্রে কুরআনের অন্যান্য বিধিবিধান গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। কুরআনের কিছু অংশের ওপর ঈমান আনা এবং কিছু অংশকে অস্বীকার করা কুরআন প্রত্যাখ্যানেরই অন্তর্ভুক্ত।
কুরআন প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণাম : যেহেতু কুরআন প্রত্যাখ্যানকারীরা ইসলামী জীবনাদর্শকেই প্রত্যাখ্যান করে, সেহেতু এমন কাফিরদের পরিণাম হলো জাহান্নামের আগুন, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর (আয়াত ২৪)। অনেক মানুষ পাথর দিয়ে মূর্তি বানিয়ে উপাসনা করে। এখানে বলা হয়েছে, এসব পাথরও আগুনের ইন্ধন হবে। সে শাস্তি ও পরিণাম হবে অনন্তকালের। লেখক : শিক্ষাবিদ ও বহু গ্রন্থ রচিয়তা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com