বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনারসের পাতার আঁশ থেকে সিল্ক কাপড় তৈরির শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাউজানে পথচারীদের মাঝে যুবলীগের ফলমূল ও ছাতা বিতরণ

শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হলেন সাজেদা সুলতানা

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ-২০২৩ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় গাজীপুরে শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরীতে নির্বাচিত গাজীপুর জেলা ও কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা সাজেদা সুলতানা। কালীগঞ্জ উপজেলা গাজীপুর জেলার অন্যতম একটি উপজেলা। ঢাকা শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী একটি উপজেলা। এই উপজেলারই একটি ইউনিয়ন নাগরী। সেই নাগরী ইউনিয়নের গারারিয়া গ্রামের কর্দমাক্ত মেঠো পথ ধরেই হেটে হেটে বাগদী প্রাইমারী স্কুল, বাগদী হাই স্কুলের মাটির ঘরের গন্ডি পেরিয়ে আজ সেই গ্রামের গর্বের ধন হয়ে উঠেছেন একজন মহীয়সী নারী। পিতা-মাতা দুজনই স্কুল শিক্ষক। সীমিত উপার্জন কিন্তু ব্যয়ের খাতা যেন মহাসমুদ্র। টানাপোড়েনের সংসার। চার সস্তানসহ আট জনের পরিবারে অভাব যেন ঘোমটা পরা বধু। আবুল বাশার ও মাকসুদা বেগম দম্পতির কন্যা সাজেদা সুলতানা। পুতুলের মত মেয়ে সাজেদা সুলতানা, বড় আদরের। কিন্তু দিনশেষে তার পরিচয় একজন মেয়ে হিসেবেই। আর একজন মেয়ে যখন বড় হয়ে ওঠে সে যেন আর মানুষ থাকেনা, তার পরিচয় হয় বোঝ হিসেবেই। যে বোঝা নামক মানুষটার থাকে হাজারও প্রতিবন্ধকতা। এলাকার শিক্ষিত পরিবার বলেই হয়তো পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা কম ছিল সাজেদা সুলতানার। কিন্তু সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধতা থেকে নিস্তার মেলেনি। কিন্তু তিনি সমস্ত বাঁধাকে উপেক্ষা করে শুধু ছুটেছেন, কেবল ছুটেছেন। কারণ তার মস্তিষ্কে যে ভিন্ন বাসনা, মানুষ হতে হবে। সেই মানুষ হওয়ার বাসনা থেকেই বিদুৎবিহীন গারারিয়ায় হ্যারিকেন কিংবা কুপির আলোয় থেকেও নিজেকে আলোকিত করেছেন।
প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক কোন ক্লাসেই ১ম স্থান হাতছাড়া হতে দেননি। ইচ্ছে ছিল কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পাঠের; কিন্তু সে সময়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা কিংবা নিরাপত্তা সে ইচ্ছের পাখিটাকে ডালে বসতে দেয়নি। হয়তো সেই উড়ন্ত বাসনাই তাকে পৌঁছে দিয়েছিল সফলতার শ্রেষ্ঠতম পর্যায়ে। বড় ভাই ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুবাদে সুযোগ হয়েছিল বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হওয়ার। তিনি ঘর ছেড়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক শহরে ঠাঁই নিয়েছিলেন। হয়তো সে শহর নিজ উপজেলার কোলঘেষেই কিন্তু আজব সে শহরে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল তাকে। ঠিকই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে অর্জন করেছিলেন স্টার মার্ক। যেন জীবনের সফলতার সূচনা। যদিও এ অর্জনের জন্য দিতে হয়েছিল অনেক শ্রম আর মেধার পরিচয়। ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হবেন, কিন্তু ভাগ্য বোধয় সেভাবে চায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজি বিভাগে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হননি। অবশেষে সুযোগ মেলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে ভেটেনারি সাইন্স এ ডিভিএম ডিগ্রী অর্জন করেন। জ্ঞান আহরণের বাসনা তাঁকে অদম্য করে তোলে। থেমে থাকেননি। একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্যাথলজিতে এমএস ডিগ্রী অর্জন করেন। গ্রামের মেয়েদের বেড়ে ওঠা, শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাওয়া যে কি কঠিন কেবলমাত্র তারাই জানেন। সাজেদা সুলতানাও হয়তো এর বাইরে ছিলেননা। একদিকে কঠিন সংগ্রাম করে টিকে থাকা, অন্যদিকে বিয়ের চাপ, সামাজিক চাপ, আরও কত কি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করলেন সাজেদা সুলতানা। শিক্ষাজীবন শেষে স্বভাবগত ভাবেই যোগ দিয়েছেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ঋঅঙ এ। পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেন ২৭তম বিসিএস এ। সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হন ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে। কিন্তু তাঁর বাসনা যেন ভিন্ন। একদিকে জ্ঞান আহরণের সন্ধান, অন্যদিকে নিজের অর্জিত জ্ঞান বিলিয়ে দেবার প্রয়াস। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৩ সালে প্যাথলজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই মলিন গারারিয়া, বাগদী গ্রামের আবুল বাশার ও মাকসুদা বেগম দম্পতির কন্যা সাজেদা সুলতানা ধাপে ধাপে জীবনের গন্ডি পেরিয়ে সহযোগী অধ্যাপক হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে। জীবনের গল্পের পাতায় যুক্ত হয়েছে স্বামী, সংসার ও সন্তান। স্বামী মো. মইন উদ্দীন খন্দকার, আইএমইডির সিনিয়র সহকারী সচিব, ইতোপূর্বে যিনি দায়িত্বপালন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়ায়। দুই সস্তানের জননী সাজেদা সুলতানা। গল্পটা শেষ হয়ে যায়নি। সংসার-সস্তান, চাকুরিজীবন, সবকিছু রেখেও থেমে যাননি এই নারী। সব কিছু সামলিয়েও ভেটেরিনারি প্যাথলজিতে সম্পন্ন করেছেন পিএইডি। দেশে ও বিদেশের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ১৫টিরও বেশি গবেষণাপত্র। তিনিই সম্ভবত: কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের প্রথম পিএইচডি ডিগ্রীধারী। নাগরী ইউনিয়ন তথা কালীগঞ্জের গর্ব ড. সাজেদা সুলতানা গর্বিত করে চলেছেন ভেটেরিনারি শিক্ষাকে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com