শুরু হয়েছে আমন ধান চাল সংগ্রহের কার্যক্রম। পটুয়াখালীর কলাপাড়া খাদ্য অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মচারীর যোগশাজোসে একটি অসাধু চক্র নিম্ম মানের চাল সরকারী গোডাউনে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। বিগত বছরেও এমন কার্যক্রম করে সে সময় নিম্ম মানের চাল সরবরাহ করে টাকা তুলে নিতে খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তার সাথে অনৈতিক অর্থের লেন দেন করা হয় এ সংশ্লিষ্ট লেনদেনের একটি ব্যাংক হিসাবের তথ্যে এর প্রমানও মিলেছে। জানাযায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানিতে পচা ধান সংগ্রহ করে তা থেকে চাল বের করে মজুত করে কলাপাড়ার বীচ অটো রাইচ মিল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আর এসব চাল সুযোগ বুঝে সরকারী গোডাউনে সরবরাহ করা হয়। আর এবছরও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বীচ অটো রাইচ ঘুরে এর সত্যতাও মিলেছে। অটো রাইচ এর গোডাউনে গিয়ে দেখা যায় গত বছরের পুরাতন এবং নিন্ম মানের চাল সেখানে মজুদ করা হয়েছে। পাশপাশি দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যান্ডের বস্তায় চাল ঢুকিয়েও মজুত করে রাখা হয়েছে। এদিকে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ভাল চালের সাথে সে সব চাল পটুয়াখালীর কলাপাড়া এলএসডিতে গোডাউনে বীচ অটো রাইস চাল সরবারহ করা শুরু করেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর কার্যালয়ের উপ সহকারী খাদ্য পরিদর্শক মেহেদী হাসানের সাথে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমেই বীচ অটো রাইচ কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর খাদ্য গোডাউনে সরকারী ভাবে নিম্ম মানের চাল সরবরাহ করে থাকে। আর এ বাবদ প্রতি বছর খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীকে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করা হয়। গত বছরেও উপ সহকারী খাদ্য পরিদর্শক মেহেদী হাসন এর হিসাবে পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করে বীচ অটো রাইচ কর্তৃপক্ষ। ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে সোনানী ব্যাংকের কলাপাড়া শাখায় মেহেদী হাসানের (সঞ্চয়ী হিসাব নং ৪৩১১৭০১০৩৪১৭১) পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়াও নগদ অর্থ প্রদান করারও অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। অভিযোগ রয়েছে কলাপাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর কার্যালয় থেকে চাল সরবরাহের আগেই চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে বিল দিয়ে দেয়া হয় আর তা থেকেই নিজেদের ঘুষের টাকা রেখে দেন উপজেলা খাদ্য অফিস সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয় জানতে চাইলে উপ-সহকারী খাদ্য পরিদর্শক মেহেদী হাসান টাকা গ্রহনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বীচ অটো রাইচ এর মালিক এর সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আমার কাজীনের মামা শ^শুর। তার কাছ থেকে তিনি টাকাটা ধার নিয়েছিলেন পারিবারিক প্রয়োজনে, যেমন চিকিৎসা, আমার এক ভাই বিদেশ গিয়েছিলো তাই। একবারই টাকা নিয়েছেন এবং তা পরিশোধও করেছেন। এখনও কিছু টাকা তিনি মনে হয় পাবেন। ঘর তৈরী করতে টাকা নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওনার কাছ থেকে ঘর তৈরীর টাকা নিব কেন। আমি একা আমার ভাই বোন নেই। আমিতো ঘরই করিনি। কলাপাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ নুরুল্লাহ জানান, এবার কলাপাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৪৮২ মেট্রিকটন চাল এবং ৯২৪ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। চাল সরবরাহের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়েছে এর মধ্যে বীচ অটো রাইচ ৮৪৭ মেট্রিকটন এবং ৬৩৫ মেট্রিকটন চাল খেপুপাড়া অটো রাইচ সরবাহ করবে। ইতিমধ্যেই ৮৪৭ মেট্্িরকটনচাল সংগ্রহ করা হয়েছে। বীচ অটো রাইসমিলে কি চাল আছে তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। একটা মিলে ধান সংগ্রহ করে চাল তৈরী করে থাকে। মিলে একটি কালার শর্টার মেশিন আছে সেটা দিয়ে বেছে সব কিছু আলাদা করতে হয়। মরা দানা, ভাঙ্গা দানা তার পর বিবর্ন দানা। সেই চালটা ওখানে মজুদ থাকবেই। এটা স্বাভাবিক। ওইটা আবার আলাদা জায়গায় বিক্রি হয়। মাছের খাবার এবং ফিড মিলে এসব চাল নেয়। গোডাউনে খারাপ চাল দেয়া হলে এর দায় সবার উপর বর্তায়, আমিও এর বাইরে নয়।’ আমাদের এলএসডিতে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আছেন। তার পরীক্ষা করে চাল রাখেন। আমিও মাঝে মাঝে দেখি। এ বিষয়ে বীচ অটো রাইচ এর মালিক ইশাকুর রহমান জানান, ‘তার গোডাউনে বিভিন্ন মানের চাল রয়েছে কিন্তু তিনি সরকারী গোডাউনে যে চাল সরবরাহ করছেন তার মান ভালো।
আমার মিলে ভোজন চাল ও কাজল লতা ধানের চাল আছে। এই চালগুলি ভোলা স্বন্দীপ হাতিয়াতে প্রচুর চলে। আমাকে অনেকে ফোন দিয়ে বলে আপনি পচা চাল গোডাউনে দেন, লাল চাল দেন। এটা তো গোডাউনের ব্যাপার, তারা পচা চাল নিবে না লাল চাল নিবে এটা তাদের ব্যাপার। তারাতো ওই চাল নেয় না। আপনার মিলে নূরজাহানের স্টীকার লাগানো বস্তায় চাল কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে চাল বা বস্তা কি আছে এখন?। কোথায় গেছে চাল এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনারা খোচাখুচি করলে সেই চাল কি আর মিলে রাখা যায়। অপরদিকে উপ সহকারী খাদ্য পরিদর্শক মেহেদী হাসান এর সাথে অর্থ লেনদের এর বিষয় জানতে চাইলে ইশাকুর রহমান বলেন, মেহেদী হাসান এর কাছ থেকে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে তিনি বিশ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন এবং সেই টাকাই তিনি পরিশোধ করেছেন।’ পরে আবার তিনি বলেন, ও আমার ভাগ্নি জামাইর আপন চাচাতো ভাই। মেহেদী বাড়ী ঘর করছে তাই টাকা নিয়েছে। প্রায়ই টাকা নেয়, আবার দিয়ে দেয়। পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ মনোয়ারে হোসেন জানান, পটুয়াখালী জেলায় এবার খাদ্য অধিদপ্তর জেলায় মোট ৪ হাজার ২৪৫ মেট্রিকটন চাল এবং ৫ হাজার ৩৪৩ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করবে। প্রতি কেজি ধান ১২ টাকা এবং প্রতি কেজী চাল ৪৪ টাকা কেজিতে সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত ২৩ নভেম্বর থেকে এই সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। তবে কোন অবস্থাতেই নিন্ম মানের চাল সংগ্রহ করা হবে না বলে জানান তিনি। পাশপাশি বীচ অটো রাইস এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয় খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের কথা জানান। উপ সহকারী খাদ্য পরিদর্শক মেহেদী হাসানের ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা গ্রহনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।