রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন

ট্রেনে আগুন: যেসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখনও

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিনটি বগিতে মঙ্গলবার ভোরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনের কাছে এই নাশকতা ঘটে। এতে এক নারী ও তার শিশুসন্তানসহ ওই ট্রেনের চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। তবে এই আগুনের ঘটনার কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। ট্রেনের জানালা খোলা ছিল না কি বন্ধ ছিল, চলন্ত গাড়িতে কীভাবে আগুন লাগলো, বগিতে থাকা অন্য যাত্রীরা কীভাবে বের হলেন, এক বগি থেকে আরেক বগিতে যাওয়ার দরজাটি খোলা না বন্ধ ছিল, আগুন তেজগাঁও স্টেশনে না তার আগেই লেগেছিল— এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে লোকজন।
ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, তেজগাঁও স্টেশনের আশেপাশের কোনও স্থানে চলন্ত ট্রেনেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। পুলিশ বলছে, ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশন পার হয়ে খিলক্ষেতে এলে বগিগুলোতে আগুন দেখতে পান যাত্রীরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে বলা যাবে। বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে এক নারী ও তার শিশুসন্তানসহ ওই ট্রেনের চার যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যান বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। পরে তিনটি ইউনিট গিয়ে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে আগুন নেভায়।
গত ১৩ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে রেখে গেলে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয় এবং এক যাত্রী নিহত হন
এক সপ্তাহ আগে একই মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি গাজীপুরে নাশকতার শিকার হয়। দুষ্কৃতিকারীরা রাতের কোনও এক সময় গ্যাস কাটার দিয়ে লাইন কেটে রাখে, ১৩ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের গাজীপুরের বনখড়িয়া (চিলাই নদীর) ব্রিজে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ দুর্ঘটনায় ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা এলাকার মুরগী ব্যবসায়ী আসলাম (৩৫) মারা যান। আহত হন কমপক্ষে ১০ জন। গত মঙ্গলবার ভোরের ঘটনা প্রসঙ্গে তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন যাত্রীদের বরাত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশন পার হয়ে খিলক্ষেত এলাকায় এলে বগিগুলোতে আগুন দেখতে পান যাত্রীরা। তারা ডাক-চিৎকার শুরু করলে চালক ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে থামান। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ওসি। বিষয়টি নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শাজাহান শিকদার বলেন, আমাদের ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রেনটিকে দাঁড়ানো অবস্থায় পায়। আমাদের ধারণা তেজগাঁও স্টেশনের কাছাকাছি কোথাও ট্রেনটিতে আগুন ধরে। পরবর্তীতে আমাদের লোকজন গিয়ে আগুন নেভায়।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এসএম সলিমুল্লাহ বাহার বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে উনারাই ভালো বলতে পারবেন।
ট্রেনে নাশকতার এই ঘটনার পর মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আহত একজনের কাছে যেটুকু জানতে পেরেছি, ভেতরে যারা ছিল, তারাই সেখানে আগুন দিয়েছে। সে নিজেও সেখানে ছিল। সে দেখেছে সিটের ভেতরে প্রথম আগুন দিয়েছে এবং ওই আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে গেছে। যেহেতু ভোর ছিল, অনেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আমরা দেখেছি একজন মা তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন, হয়তো বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কোনও অবস্থাতেই পার পাবে না। তারা অতীতেও পার পায়নি। ট্রেনে, বাসে যেসব জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে, এর প্রত্যেকটি ঘটনায় আমরা অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তারা স্বীকারও করেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে তাদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। আমাদের সতর্কতা ছিল। তারপরও যেহেতু এই ঘটনা ঘটেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, সিআইডি, ডিবি এবং রেলওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে যেন পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’ এদিকে তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুনের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগীয় প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) খায়রুল ইসলামকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। -বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com