কাকে সঙ্গী-সাথী বানাতে হবে বা কার সান্নিধ্যে চলতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘মু’মিনরা যেন অন্য মু’মিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে প্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ (সূরা আলে ইমরান-২) ‘হে মু’মিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সূরা তাওবাহ-১১৯)
রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘ভালো এবং দুষ্ট ব্যক্তি মিশক (সুগন্ধি) বহনকারী ও হাঁপরে ফুঁকদাতা (কামার) ব্যক্তির মতো। মিশক (সুগন্ধি) বহনকারী ব্যক্তির অবস্থা তো এমন যে সে হয়তো এ মিশক তোমাকে উপহার দেবে অথবা তুমি তার থেকে তা খরিদ করবে অথবা তুমি তার থেকে এর সুঘ্রাণ লাভ করবে। আর হাঁপরে ফুঁকদাতা ব্যক্তি হয়তো সে তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি-২৬৪১)
‘অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকিত্ব ভালো। আর একাকিত্বের চেয়ে সৎ সঙ্গী ভালো।’ (বুখারি-২৪৩৯)
‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম (স্বভাব-চরিত্র) দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে তা যেন অবশ্যই যাচাই করে নেয়।’ (জামে তিরমিজি-২৩৪৭)
একদা এক বেদুইন নবী সা:-কে জিজ্ঞাসা করেন, কিয়ামত কবে হবে? নবী সা: উত্তরে বলেন, ‘তার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ?’ লোকটি বলে, (নফল) সালাত, সিয়াম, সাদাকা হিসেবে বেশি কিছু আমার নেই; কিন্তু আমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে ভালোবাসি। নবী সা: বলেন, ‘তাহলে তুমি তার সাথী হবে যাকে তুমি ভালোবাসো।’ (মুসলিম-২৬৩৯)
হজরত আলকামাহ রহ: বলেন, ‘বন্ধুত্ব করো তার সাথে, যার সাহচর্য তোমাকে সুন্দর করে, তুমি অভাবগ্রস্ত হলে তোমাকে সাহায্য করে, ভুল বললে তোমার ভুল সংশোধন করে, যদি তোমার মধ্যে কোনো মঙ্গল দেখে, তো গুনে গুনে রাখে, যদি তোমার মধ্যে কোনো ত্রুটি দেখে তো শুধরে দেয়, কঠিন সময়ে তোমাকে সান্ত¡না দেয়।’
আল্লাহভীরু, অভিজ্ঞদের সোহবত ও পরামর্শ গ্রহণ যেমন ইহকালীন বিষয়ে জরুরি ও সহযোগী, অনুরূপ পরকালীন বিষয়েও দরকারি ও কল্যাণময়। কথায় আছে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আবার কেউ কেউ বলেন, সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। বাস্তবেও দেখা যায়, অনেক আল্লাহওয়ালা বুজুুর্গ ও শুদ্ধ পুরুষের সান্নিধ্য অবলম্বন করে অপরাধজগতের বড় বড় অপরাধী যেমন- চোর, ডাকাত, মাদকসেবী, ব্যভিচারী, দুর্নীতিবাজ ও বেয়াদব শ্রেণীর লোক হেদায়েতের পথ পেয়েছে। শুদ্ধ-সুন্দর, সফল জীবন লাভ করেছে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘উম্মতের আলেমরা আমার উত্তরাধিকারী।’ (জামে তিরমিজি-২৬৮২) তাই বর্তমানে দ্বীনী বিষয়ে আলেমদের দিকনির্দেশনা ও সোহবত গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। লেখক : পরীক্ষক, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা