টান টান উত্তেজনার ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে হতাশা উপহার দিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ১ বল বাকি থাকতে পাড়ি দিয়েছে লক্ষ্যে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা তুলে নিয়েছে আসরে নিজেদের প্রথম জয়। বিপরীতে টানা দুই ম্যাচে হারের তিক্ত স্বাদ পেল তামিম ইকবালের বরিশাল। গত মঙ্গলবার টসে হেরে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১৬১ রান করে বরিশাল। আসরে দ্বিতীয় অর্ধশতকের দেখা পান মুশফিকুর রহিম। বিপরীতে জয়ের জন্য লড়াই করতে থাকা কুমিল্লার শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ২২ রান। যা ১ বল আর ৪ উইকেট হাতে রেখে পাড়ি দেয় ভিক্টোরিয়ান্সরা।
লক্ষ্য তাড়ায় কুমিল্লার শুরুটা আশানুরূপ হয়নি। দুনিথ ভেল্লালেগের জোড়া আঘাতে চতুর্থ ওভারেই বড় ধাক্কা খায় তারা। আসরে প্রথমবার খেলতে নেমে মোহাম্মদ রিজওয়ান ফেরেন ১৪ বলে ১৭ রানে। পরের বলেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে শোয়েব মালিকের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন তাওহীদ হৃদয়। ২৬ রানে ২ উইকেট হারানো কুমিল্লার তৃতীয় উইকেটের পতন হয় নবম ওভারে, অধিনায়ক লিটন দাস ফেরেন ১৯ বলে ১৪ রানে। ততক্ষণে অবশ্য আলো ছড়াতে শুরু করেছেন ইমরুল কায়েস। লিটনের বিদায়ের পর রোস্টন চেজকে সাথে নিয়ে চেষ্টা করেন হাল ধরার। তবে চেজ ১৩ রানে ফিরলে ব্যর্থ হয় চেষ্টা।
তবে ছয়ে নামা জাকের আলি হতাশ করেননি, যোগ্য সঙ্গ দেন ইমরুলকে। সুবাদে টানা দ্বিতীয় অর্ধশতকের দেখা পেয়ে যান ইমরুল, ৩৯ বলে পূরণ করে এই মাইলফলক। যদিও ফেরেন এর পরপরই। আউট হন ৪১ বলে ৫২ রানে। তবে জাকেরের সাথে তার ২৫ বলে ৩৫ রানের জুটি লক্ষ্যে অবিচল রাখে কুমিল্লাকে।
ইমরুল ফিরলে জাকের সঙ্গী হিসেবে পান খুশদিল শাহকে, যদিও এই জুটিতেও নিশ্চিত হয়নি জয়। শেষ ওভারে যখন ১৩ প্রয়োজন, তখন খুশদিল ফেরেন ৭ বলে ১৪ করে। ফলে আবারো দুলতে থাকে ম্যাচের ভাগ্য। তবে বরিশাল সমর্থকদের হতাশ করে পরের ৪ বলেই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মাথু ফ্রড। দ্বিতীয় বলে দৌড়ে ২ রান নেয়ার পর, তৃতীয় বলে খালেদ আহমেদকে ছক্কা ও চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকান ফ্রড। পঞ্চম বলে দৌড়ে প্রান্ত বদল করতেই আসরে প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়ে যায় কুমিল্লা। ফ্রড ৪ বলে ১৩ ও জাকের অপরাজিত থাকেন ২০ বলে ২৩ রানে। এর আগে, মুশফিকুর রহিম ও সৌম্য সরকারের দৃঢ়তায় মধ্যম মানের পুঁজি পায় ফরচুন বরিশাল। এই দু’জনে ভালো করলেও বাকিদের ব্যর্থতায় মাত্র ১৬১ রানেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বরিশালকে।
ভালো শুরু করেও ইনিংস টানতে না পারার ধারা যেন আজও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তামিম ইকবাল। ১৬ বলে ১৯ করে ধরেন সাজঘরের পথ। তবে তামিম ফেরার আগেই আরো দুই উইকেট হারায় বরিশাল। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে গোল্ডেন ডাক মারেন মেহেদী মিরাজ। প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলতে এসে প্রিতম কুমার ব্যর্থ হন নিজেকে প্রমাণে। ফেরেন ৭ বলে ৮ করে। পাওয়ার প্লে শেষ করে কুমিল্লা ৩ উইকেটে ৪৪ রানে। সেখান থেকে রান বাড়ানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন চারে নামা সৌম্য সরকার। আগের রাতে ছন্দে ফেরার আভাস দেয়া সৌম্য সুবাস ছড়ান এদিন। আগের রাতে খুলনার বিপক্ষে যেখানে থেমেছিলেন মুশফিক, আজ যেন শুরু করেন সেখান থেকেই। তামিমের বিদায়ের পর মাঠে নেমে ধরেন দলের হাল। সৌম্যকে নিয়ে গড়েন ৪৮ বলে ৬৬ রানের জোট। যুগলবন্দী ভাঙে ৩১ বলে ৪২ করে সৌম্য আউট হলে। মোস্তাফিজের দুর্দান্ত ইয়র্কারে স্ট্যাম্প ভাঙ্গে তার।
এরপর অবশ্য মুশফিককে সঙ্গ দিতে পারেননি শোয়েব মালিক, মাহমুদউল্লাহদের কেউ। মালিক ও মাহমুদউল্লাহ ফেরেন ৪ রান করে। তবে দলের ওপর প্রভাব পড়তে দেননি মুশফিক, খেলতে থাকেন নিজের মতোই। টানা তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩৫ বলে অর্ধশতক পূরণ করে তিনি। দুনিথ ভেল্লালেগেও ফেরেন ৪ রান করে। ১৪৮ রানে ৭ উইকেট হারায় বরিশাল। শেষ ওভারে এসে নিজের উইকেট হারান মুশফিকও, আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ৪৪ বলে ৬২ রান। শেষ বলে আব্বাস আফ্রিদি আউট হলে ৯ উইকেটে ১৬১ রানে থামে বরিশালের ইনিংস। কুমিল্লার হয়ে মোস্তাফিজ ৩১ রানে ৩টি এবং ২টি করে উইকেট নেন ম্যাথু ফ্রড ও রোস্টন চেজ।