একবছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২৪৮৭ জন হয়েছেন । সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন রোড সেফটি ফাইন্ডেশনের কর্মকর্তারা। গত বছরে (২০২৩) দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯১১টি। নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৫২৪ জন এবং আহত ১১ হাজার ৪০৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭৪ (১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ), শিশু ১১২৮ (১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ)। ২ হাজার ৫৩২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২ হাজার ৪৮৭ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মোট সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪৫২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৪২ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১০৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত, ৭২ জন আহত এবং ৪৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ট্রলার ডুবে ৩৩টি গরুর মৃত্যু ঘটেছে। ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘২০২৩ সালের সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনে।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিহত হয়েছেন ২৪৮৭ জন (৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ), বাসযাত্রী ২৭৪ জন (৪ দশমিক ১৯ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৩৮৪ জন (৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জিপের যাত্রী ২২৯ জন (৩ দশমিক ৫১ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পু-লেগুনা) ১২০৯ জন (১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-চান্দের গাড়ি-মাহিন্দ্র-টমটম) ২৯৬ জন (৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৯৩ জন (২ দশমিক ৯৫ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৩৭৩টি (৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২৮৮৭টি (৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ) আ লিক সড়কে, ৯৯৪টি (১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৫৮৩টি (৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭৪টি (১ দশমিক ০৭ শতাংশ) দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন: দুর্ঘটনার মধ্যে ১২৯১টি (১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩১৪৯টি (৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৪৪৬টি (২০ দশমিক ৯২ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৮১৭টি (১১ দশমিক ৮২ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ২০৮টি (৩ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন: সড়ক দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ড্রামট্রাক ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি তেলবাহী ট্যাংকার, বিদ্যুতের খুঁটিবাহী ট্রাক, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স, পাজেরো জিপ ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পু-লেগুনা ইত্যাদি) ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-চান্দের গাড়ি) ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা : দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা মোট ১১ হাজার ৩৬৬টি (বাস ১৫০৩, ট্রাক ১৮০৬, কাভার্ডভ্যান ২৮৩, পিকআপ ৪৩২, ট্রলি ১৭৮, লরি ১১৪, ট্রাক্টর ১৭৪, ড্রাম ট্রাক ৯৭, পুলিশ ও র্যাবের পিকআপ ১৩, প্রিজনভ্যান ৪, বিজিবি ট্রাক ২, আর্মি ট্রাক ২, তেলবাহী ট্যাংকার ১৪, লং ভেহিকেল ১, বিদ্যুতের খুঁটিবাহী ট্রাক ৭, কার্গো ট্রাক ১, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ৫, মাইক্রোবাস ২০৯, প্রাইভেটকার ২৫২, অ্যাম্বুলেন্স ৬৮, পাজেরো জিপ ১৭, মোটরসাইকেল ২৬১৯, থ্রি-হুইলার ১৯৬১ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-লেগুনা-টেম্পু ইত্যাদি), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৭২৪ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-চান্দের গাড়ি ইত্যাদি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৫৩১ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ৩৪৯টি।
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৩২১টি (৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ), সকালে ১৯৪৬টি (২৮ দশমিক ১৫ শতাংশ), দুপুরে ১৫৭১টি (২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ), বিকালে ১১১৩টি (১৬ দশমিক ১০ শতাংশ), সন্ধ্যায় ৬১৮টি (৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ) এবং রাতে ১৩৪২টি (১৯ দশমিক ৪১ শতাংশ)।
দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান: দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, প্রাণহানি ২৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ০২ শতাংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ, প্রাণহানি ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, প্রাণহানি ৮ দশমিক ০৯ শতাংশ ঘটেছে।ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এ বিভাগে ১৯৬৭টি দুর্ঘটনায় ১৬৯৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৪৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮৮ জন নিহত হয়েছেন।
রাজধানীর সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ: রাজধানীতে ২৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৩ জন নিহত এবং ৩৩৬ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, নারী ১০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং শিশু ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। নিহতদের মধ্যে পথচারী ৪১ দশমিক ১৪ শতাংশ, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং বাস, রিকশা, সিএনজি ইত্যাদি যানবাহনের চালক ও আরোহী ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
রোড সেফটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দুর্ঘটনাগুলো রাতে এবং সকালে বেশি ঘটেছে। বাইপাস রোড না থাকার কারণে রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীতে মালবাহী ভারী যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। ফলে রাস্তা পারাপারে পথচারীরা বেশি নিহত হচ্ছেন। এছাড়া দীর্ঘ সময় যানজটের কারণে যানবাহন চালকদের আচরণে অসহিষ্ণুতা ও ধৈর্য্যহানি ঘটছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে কাজ করছে। রাজধানীর দুর্ঘটনার সময় পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ভোরে ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ, সকালে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ, দুপুরে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, বিকালে ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং রাতে ৪০ দশমিক ১৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানীতে দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে বাস ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্যাংকার-ময়লাবাহী ট্রাক-ইটভাঙা গাড়ি ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৫ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-জিপ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (অটোরিকশা-অটোভ্যান-সিএনজি-লেগুনা-মিশুক) ১১ দশমিক ১১ শতাংশ এবং রিকশা-রিকশাভ্যান ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
রাজধানীতে যানবাহনের তুলনায় অপ্রতুল সড়ক, একই সড়কে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক, স্বল্প ও দ্রুত গতির যানবাহনের চলাচল, ফুটপাত হকারের দখলে থাকা, ফুটওভার ব্রিজ যথাস্থানে নির্মাণ না হওয়া ও ব্যবহার উপযোগী না থাকা এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসচেতনতার কারণে অতিমাত্রায় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে।
গত বছর চট্টগ্রাম জেলায় ৩২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৮৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৪৪৩ জন। সবচেয়ে বেশি ৫১ জন নিহত হয়েছেন মিরসরাইয়ে। সীতাকুন্ডুতে ৩৪, হাটহাজারীতে ২৭, পটিয়ায় ২৪, রাঙ্গুনিয়ায় ২১, চন্দনাইশে ১৯, লোহাগড়ায় ১৮, রাউজানে ১৪, আনোয়ারায় ১০, সাতকানিয়ায় ৯, বোয়ালখালীতে ৮, বাঁশখালীতে ৭, ফটিকছড়িতে ৬, কর্ণফুলীতে ৬, মহানগরীতে ৭, বাকলিয়ায় ৫ এবং কদমতলী-পতেঙ্গা-কোতোয়ালী-বায়েজিদ বোস্তামী-পাশলাইশ, আকবর শাহ-চাঁন্দগাঁও-ডাবল মুরিং-ইপিজেড এবং বন্দরে ২৩ জন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিহত হয়েছেন ৮৩ জন, যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যানবাহনের চালক এবং যাত্রী ২৯ জন, পথচারী ৮৫ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী ৯০ জন এবং বাইসাইকেল আরোহী ২ জন নিহত হয়েছেন।
মহাসড়কে নিহত হয়েছেন ১৪৩ জন, আ লিক সড়কে ১১৫ জন, গ্রামীণ সড়কে ১৩ জন, শহরের সড়কে ১৫ জন এবং কর্ণফুলী টানেলের সংযোগ সড়কে ৩ জন নিহত হয়েছেন।
রেল-ক্রসিং দুর্ঘটনা: গত বছরে ৮১টি রেল ক্রসিং দুর্ঘটনায় ১০৭ জন নিহত এবং ৬৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া রেল ট্র্যাকে ট্রেনে কাটা পড়ে ২০৬টি দুর্ঘটনায় ২১১ জন নিহত হয়েছেন (মোট ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছেন)। সারা দেশের ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিশ্লেষণ: ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৫৩২টি, নিহত হয়েছেন ২৪৮৭ জন এবং আহত ১৯৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে ১৯০৯ জনের বয়স (৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ) ১৪ থেকে ৪৫ বছর। অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে (৫৭২টি) ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে (৯০৪টি) ৩৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, মোটরসাইকেলে ভারী যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে (১০২৫টি) ৪০ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে (৩১টি) ১ দশমিক ২২ শতাংশ।
৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ (৯১৭টি) দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালক এককভাবে দায়ী ছিল। দুর্ঘটনার জন্য বাসের চালক দায়ী ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ, (২৬১টি) ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি চালক দায়ী ৪০ দশমিক ৯১ শতাংশ (১০৩৬টি), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস চালক দায়ী ২ দশমিক ৭২ শতাংশ (৬৯টি), থ্রি-হুইলার ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ (১০৮টি), বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান চালক দায়ী ০ দশমিক ৫১ শতাংশ (১৩টি), পথচারী দায়ী ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ (৯৭টি) এবং অন্যান্য কারণ দায়ী ১ দশমিক ২২ শতাংশ (৩১টি)।
২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ (৭৪৪টি) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৪১ দশমিক ৫৮ শতাংশ (১০৫৩টি) ঘটেছে আ লিক সড়কে, ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ (৪৩৪টি) ঘটেছে গ্রামীণ সড়কে এবং ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ (৩০১টি) দুর্ঘটনা ঘটেছে শহরের সড়কে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে মোট মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর ও যুবক। এদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা এবং না মানার প্রবণতা প্রবল। দেশে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর-যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নিহতের ঘটনাও বাড়ছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার একটি ব্যাপক অংশ ঘটছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ও বাসের ধাক্কা, চাপা এবং মুখোমুখি সংঘর্ষে। এসব দ্রুত গতির যানবাহন চালকদের বেশিরভাগই অসুস্থ ও অদক্ষ। এদের বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর কারণে যারা সতর্কভাবে মোটরসাইকেল চালান তারাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।: মোটরসাইকেল ৪ চাকার যানবাহনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য না হওয়া এবং যানজটের কারণে মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা বাড়ছে।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫০ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৫১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৪৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। অবশ্য ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমেছে ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং প্রাণহানি কমেছে ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে কর্মরত সংস্থাগুলোর সচেতনতা সৃষ্টি, হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা এবং ডলার সংকটে পণ্য আমদানি হ্রাস পাওয়ায় পণ্যবাহী যানবাহন কিছুটা কম চলাচলের কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সামান্য কমেছে গত বছরের তুলনায়। উল্লেখ্য, বেশিরভাগ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে পণ্যবাহী যানবাহনের ধাক্কায় বা মুখোমুখি সংঘর্ষে। তবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার এই হ্রাস সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও টেকসই উন্নতির সূচক নির্দেশ করছে না।