বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ধারণা সূচক নিয়ে বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রতিবেদনকে ‘রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, কোনও জোট বা দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে করা এসব অপবাদকে সরকার পরোয়া করে না।
গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০২৩’ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদনটি আজ একই সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্র এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে যৌথভাবে ১০ম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এককভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ৩২, অর্থাৎ এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩১টি দেশের পরে। ব্রিফিংয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এই প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এসময় বিএনপির ‘কালো পতাকা কর্মসূচি’ নিয়েও কথা বলেন তিনি। এই কর্মসূচিকে ‘গণবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটি দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। এ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা না হলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা পাহারায় যাবে আওয়ামী লীগ। সহিংসতা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় বসে আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাজে মনোনিবেশ দিচ্ছি। মন্ত্রণালয়গুলো ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। কাজ করতে গিয়ে জনস্বার্থ বিরোধী কর্মসূচি সহ্য ও বরদাশত করা হবে না। দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবো।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘ বিবৃতি নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা এই বিবৃতি দিয়েছে তারা ভুল রিপোর্ট, তথ্যের উপর এ ধরনের অভিযোগ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হিসাবে ১০ হাজারের বেশি বন্দি জেলে নেই। কোন হিসাবে ২৫ হাজার বন্দি আছে? অপরাধ করলে বিচার করতে হবে। জামিনযোগ্য অপরাধ হলে জামিন পাচ্ছে। আইন তার নিজস্ব গঠিত চলবে। জাতিসংঘ এবং কংগ্রেসম্যানরা যে বিবৃতি দিয়েছেন তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করছি।’
‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে’ আজ রাজধানীতে সমাবেশ ও শান্তি মিছিল করার কথা ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের। আয়োজনটি স্থগিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি। সরকারি দল বলে কি নিয়ম মানবো না?’ ত্রুটিমুক্ত গণতন্ত্র পৃথিবীর কোথাও এখন নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, নতুন সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তারা কেউ ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেননি। খোদ যুক্তরাষ্ট্রও বলেনি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে একটা প্রতিক্রিয়া ছিল ওয়াশিংটনের। কিন্তু ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার কথা বলেছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশও একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজ বিশ্ব পরিস্থিতিতে পৃথিবীর অর্থনীতির উপর চরম আঘাত এসেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিশ্ব সংকটের প্রতিক্রিয়ায় আমরা সমস্যা সংকুল দিন অতিক্রম করছি। দ্রব্যমূল্য এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রমে নতুন সংসদ কঠিন দায়িত্ব পালন করবে। জনগণের সমস্যার সমাধানকে অগ্রাধিকার দিবে।’ এ সময় মন্ত্রিসভার কলেবর বৃদ্ধি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের জানান, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন শেষ হলে সেখান থেকেও কিছু যুক্ত হতে পারেন। আবার প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা পোষণ করলে কলেবর বাড়াতে পারেন।