ময়মনসিংহের ভালুকার ছোট্ট গ্রাম ধামশুর। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাবি ত এ গ্রামের প্রায় অর্ধেক এলাকা এখন বেসরকারি অর্থনৈতিক অ লের আওতায়। তার একটি অংশে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্বমানের স্কুল। নাম হেইলিবেরি ভালুকা। যেখানে পড়াশোনা করতে একজন শিক্ষার্থীকে বছরে গুনতে হবে ৪০ লাখ টাকারও বেশি। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীও পড়তে আসছে এ স্কুলে।
হেইলিবেরি যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত একটি স্কুল। ১৬০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্কুলগুলোর মধ্যে বর্তমানে প ম অবস্থানে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের চোখধাঁধানো অর্থনৈতিক উন্নয়ন নজর কেড়েছে হেইলিবেরি কর্তৃপক্ষের। এজন্য দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে প্রথম হেইলিবেরি স্কুল তাদের শাখা খুলেছে। হেইলিবেরি স্কুল ফ্র্যা াইজি দেশে প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করছে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। তারাই ঢাকার অদূরে ময়মনসিংহের ভালুকায় গড়ে তুলেছে আন্তর্জাতিক মানের এই ক্যাম্পাস।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে হেইলিবেরি ভালুকায় শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে। চলতি বছরের আগস্ট মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু হবে। এজন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশ্বমানের শিক্ষক। প্রস্তুত করা হয়েছে ক্লাসরুম, ল্যাব, লাইব্রেরি। ছাত্রদের শতভাগ আবাসন সুবিধা দিতে প্রস্তুত বোর্ডিংও। শুরুতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। হেইলিবেরি ভালুকায় দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষের দাবি, হেইলিবেরি ভালুকা হয়ে উঠবে এশিয়ার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ।
হেইলিবেরি ভালুকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ২০ একর জমির ওপর স্কুলটির অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক মানের চারতলা একাডেমিক ভবন ও ছয়তলা আবাসিক ভবন নির্মাণকাজ শেষ। সেখানে সরবরাহ করা হয়েছে আসবাবপত্র। একাডেমিক ভবনে রয়েছে তিনটি সায়েন্স ল্যাবরেটরি, একটি কম্পিউটার ল্যাব, সেমিনার রুম, বিশাল অডিটোরিয়াম, মিউজিক রুম, জিমনেসিয়াম এবং পৃথক বেশ কয়েকটি টিচার্স রুম। একাডেমিক ভবনে মোট ৪৬টি অত্যাধুনিক শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ২৪ জন ছাত্রকে পাঠদান করানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আবাসিক ভবনে ৩৯৬টি কক্ষ। এগুলোতে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতি রুমে চারজন এবং দশম থেকে দ্বাদশের শিক্ষার্থীরা প্রতি রুমে দুজন করে বসবাস করবেন।
খোলামেলা শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন ব্যবস্থা ছাড়াও স্কুলটিতে রাখা হয়েছে বিস্তীর্ণ খেলার মাঠ। সেগুলো পরিপাটি করে সাজানোর কাজ চলমান। একাডেমিক ও আবাসিক ভবনের মাঝে বড় খেলার মাঠ। সেখানে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, টেনিস, গলফ, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলার জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া একাডেমিক ভবনের অন্য পাশেও রয়েছে বিশাল আকারের খোলা মাঠ। বিনা খরচেও পড়া যাবে হেইলিবেরি ভালুকায়!
হেইলিবেরি ভালুকায় ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীকে কগনেটিভ অ্যাপটিটিউট টেস্টে (ক্যাট) অংশ নিতে হবে। এতে উত্তীর্ণ হলেই মিলবে ভর্তির সুযোগ। স্কুলটিতে শুধু মেধা থাকলেই পড়া যাবে, তা নয়। সঙ্গে বিত্তশালী অভিভাবকও প্রয়োজন। কারণ, সম্পূর্ণ আবাসিক এ স্কুলে বছরে শুধু টিউশন ফি ৩৪ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে প্রতি বছর ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ আরও ৬-৭ লাখ টাকা গুনতে হবে শিক্ষার্থীকে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা।
বছরে বাংলাদেশি মুদ্রায় একজন শিক্ষার্থীর খরচ ৪০ লাখেরও কিছু বেশি হতে পারে। তবে হতাশার কিছু নেই। হেইলিবেরি ১৫ মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ ফান্ড রেখেছে। কগনেটিভ অ্যাপটিটিউট টেস্টে অংশ নিয়ে ভালো করলে আমরা ভর্তি নেবো। কেউ যদি খুব ভালো করে তবে তাকে শতভাগ স্কলারশিপ সুবিধা দেওয়া হবে তবে কগনেটিভ অ্যাপটিটিউট টেস্টে কোনো শিক্ষার্থী খুব ভালো ফল করলে মিলবে বিনা খরচে হেইলিবেরিতে পড়ার সুযোগ। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হারে স্কলারশিপ বা বৃত্তি দেবে প্রতিষ্ঠানটি। হেইলিবেরির ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের স্কলারশিপ ফান্ড রয়েছে। মেধাবীদের ক্ষেত্রে তা খরচায় কোনো কৃপণতা করবে না হেইলিবেরি।
স্কুলটির একাডেমিক ডিরেক্টর ড. সন্দ্বীপ আনন্থানারায়ণ জানান, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার ছেলেকে হেইলিবেরি ভালুকায় ভর্তির আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে তাকে কগনেটিভ অ্যাপটিটিউট টেস্ট নেওয়া হয়। বাংলা মিডিয়ামে পড়ে আসা ওই শিক্ষার্থী টেস্টে দুর্দান্ত ফল করায় তাকে শতভাগ স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এতে ওই ছাত্র ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা খরচে হেইলিবেরিতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তবে ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের নাম জানাননি তিনি। তাছাড়া কৌশল অনুযায়ী— কোনো শিক্ষার্থীর তথ্যই প্রকাশ করে না হেইলিবেরি।
এদিকে, হেইলিবেরি ভালুকায় একজন শিক্ষার্থীর বার্ষিক টিউশন ফি ৪০ লাখের বেশি হলেও এ খরচ হেইলিবেরির যে কোনো শাখার চেয়ে অনেক কম বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। স্কুলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হেইলিবেরি বিশ্বের শীর্ষ স্কুলগুলোর একটি। এখানে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায়। তাই হেইলিবেরি ভালুকার শিক্ষার্থীরা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে।
বিশ্বমানের শিক্ষক-কারিকুলামে শিক্ষার্থীও হবে উচ্চমানের: হেইলিবেরি ভালুকার একাডেমিক ডিরেক্টর ড. সন্দ্বীপ আনন্থানারায়ণ একজন ভারতীয়। তিনি বলেন, ‘হেইলিবেরি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্কুলের একটি। বিশ্বের প্রথম সারির ১০০টি স্কুলের মধ্যে এটিই প্রথম, বাংলাদেশে যার শাখা চালু হয়েছে। এখানে বিশ্বমানের কারিকুলাম ছাড়াও শিক্ষার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরিবেশ পাবে শিক্ষার্থীরা।’
১৬০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্কুলগুলোর মধ্যে বর্তমানে প ম অবস্থানে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে প্রথম হেইলিবেরি স্কুল তাদের শাখা খুলেছে। হেইলিবেরি স্কুল ফ্র্যা াইজি দেশে প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করছে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। ঢাকার অদূরে ময়মনসিংহের ভালুকায় আন্তর্জাতিক মানের এই স্কুলের ক্যাম্পাস
খরচের বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করা হলে ড. সন্দ্বীপ বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি—এশিয়ায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এত ভালো শিক্ষার উপযোগী অবকাঠামো নেই। এখানে পড়তে খরচ কিছুটা বেশি মনে হতে পারে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হেইলিবেরি স্কুলের যে শাখা রয়েছে, সেখানকার খরচের চেয়ে বাংলাদেশ শাখায় খরচ তুলনামূলক অনেক কম। বছরে বাংলাদেশি মুদ্রায় একজন শিক্ষার্থীর খরচ ৪০ লাখেরও কিছু বেশি হতে পারে। তবে হতাশার কিছু নেই। হেইলিবেরি ১৫ মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ ফান্ড রেখেছে। কগনেটিভ অ্যাপটিটিউট টেস্টে অংশ নিয়ে ভালো করলে আমরা ভর্তি নেবো। কেউ যদি খুব ভালো করে তবে তাকে শতভাগ স্কলারশিপ সুবিধা দেওয়া হবে।’
হেইলিবেরি ভালুকার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক সাইমন ও’গ্রেডি বলেন, বাংলাদেশে আমরা বিশ্বমানের একটি স্কুল চালু করতে পেরে সত্যিই আনন্দিত। যেভাবে স্কুলের অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে এটি নিঃসন্দেহে এশিয়ার সেরা স্কুলে পরিণত হবে। বিশেষ করে আমাদের এখানে সায়েন্স ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব যেভাবে সাজানো হচ্ছে, তাতে শিক্ষার্থীরা গবেষণামুখী হয়ে উঠবে।’ হেইলিবেরি ভালুকার উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আবাসিক এ স্কুলে বছরে শুধু টিউশন ফি ৩৪ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে প্রতি বছর ভর্তি ও সেশন ফি বাবদ আরও ৬-৭ লাখ টাকা গুনতে হবে শিক্ষার্থীকে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। স্কুলটি নিয়ে ড. ফায়েজ বলেন, ‘প্রথমেই আমি একটি বিষয় জানিয়ে রাখি, হেইলিবেরি ভালুকা হলো হেইলিবেরি যুক্তরাজ্যের একটি শাখা। এটি বিশ্বের খুবই খ্যাতিমান ও উঁচুসারির একটি স্কুল। শুধু যুক্তরাজ্যে নয়, বিশ্বজুড়ে এটি পরিচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হেইলিবেরি যুক্তরাজ্যের একটি অংশ হিসেবে তাদের সেই মানটা ধরে রাখবো। যেন বিশ্বমানের একটি স্কুল হিসেবে এটি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের এখানে যে কারিকুলাম থাকবে, সেটা ক্যামব্রিজ এবং বিশ্বমানের কারিকুলামের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু কারিকুলাম বিশ্বমানের, শিক্ষকও বিশ্বমানের, শিক্ষার্থীরাও হবে উচ্চমানের।’- জাগো নিউজ