টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় আবাদি কৃষি জমির ওপরের মাটি বিক্রি করায় জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে কম মূল্যে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কিনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন। এতে ওই অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান জানান ,ধনবাড়ী উপজেলায় মোট ২৬০৫ হেক্টর তিন ফসলি আবাদি জমি আছে। চার-পাঁচ বছর ধরে এসব আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের কাছে কম দামে কিনে বিভিন্ন জায়গায় বেশি দামে বিক্রি করছেন। উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, ফসল উৎপাদনের জন্য শতকরা ৫ ভাগ যে জৈব উপাদান দরকার, তা সাধারণত মাটির ওপর থেকে ৮ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু মাটি ব্যবসায়ীরা আবাদি জমির উপরিভাগের দেড় থেকে তিন ফুট পর্যন্ত কেটে নিচ্ছেন। এতে কেঁচোসহ উপকারী পোকামাকড় নষ্ট হচ্ছে। ফলে ভালো উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন জমি হারিয়ে ফেলছে উর্বরতা শক্তি। সচেতন নাগরিক গন বলেন, প্রতিবছর বিভিন্ন পত্রিকায় আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রির সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু মাটি কাটা বন্ধে কেউ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। গতকাল ধনবাড়ী উপজেলার,মুশুদ্দি, বলিভদ্র, বীরতারা, বানিয়াজান, যদুনাথ পুর, ধোপাখালি, পাইস্কা, সহ কয়েকটি এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আগামী বছরের জন্য মজুদ করা হচ্ছে। বানিয়াজান গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ফসলি জমির মাটি বিক্রি করায় গর্তের সৃষ্টি হয়। এ গর্তের মধ্যে পাঁচ-ছয় বছর কোনো আবাদ হয় না। তিনি দুই বছর আগে ২৪ শতাংশ জমির মাটি বিক্রি করেছিলেন। এ কারণে এখনো সে জমিতে আগের অর্ধেক ধানও হয় না। চর পাড়া গ্রামের কৃষক হুর মুজ আলী বলেন, ‘মাটি বেচলে জমির ক্ষতি হয়, এ কথা আগে বুঝবার পাই নাই। নগদ টাকা পাই বলে জমির মাটি বেচি। ফসল কম হওয়ায় এলা বুঝিছি, মাটি বেচা ঠিক হয় নাই।’ মাটি ব্যবসায়ী বলেন, ১২ শতক জমিতে দেড় ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিলে ৮ হাজার ঘনফুট মাটি পাওয়া যায়। এই ৮ হাজার ঘনফুট মাটি শ্রমিক দিয়ে কেটে ট্রলিতে করে ইটভাটায় পৌঁছে দিলে ইটভাটার মালিক প্রতি হাজার ঘনফুট মাটি৪ হাজার ২৫০ টাকা হিসাবে ৩৪হাজার টাকা দেন। এতে পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয় ১৮ হাজার টাকা। জমির মালিক পান ৫ হাজার টাকা। বাকি ১১ হাজার টাকা তাঁদের লাভ থাকে। ধনবাড়ী উপজেলার কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও অনেক কৃষক নগদ টাকার লোভে জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করছেন।