রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ-ভারত আর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের মধ্যে কোনো তুলনাই হয় না : ড. হাছান মাহমুদ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ভারত সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যদিও চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গী কিন্তু তাদের সাথে অথবা অন্য যেকোনো দেশের সাথে ঢাকার যা সম্পর্ক, তার সাথে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কোনো তুলনাই চলে না। ভারতের সাথে তাদের ‘রক্তের সম্পর্ক’।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে ফরেন করেস্পন্ডেন্টস ক্লাব অব সাউথ এশিয়াতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেন যে তার দেশে ভারত-বিরোধী একটা শ্রেণি তথাকথিত ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা চালায় মাঝে মাঝেই কিন্তু এই ‘ক্যাম্পেইন’ ক্রমশ ম্রিয়মান হয়ে আসছে।
মাহমুদ বলেন, ‘তার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কেরর বৈঠকে সীমান্ত হত্যা, তিস্তার জল বন্টন, মিয়ানমার পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে।’

ভোটের সময়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে বিঘœ ঘটানোর যে চেষ্টা হয়েছিল তা ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য ‘ভারত পাশে ছিল’, তাই সে দেশের জনগণ, সরকার আর নাগরিক সমাজকে ধন্যবাদ দেন হাছান মাহমুদ।
তিনি এও বলেন যে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে প্রভুত উন্নতি করেছে, সেটাও সম্ভব হতো না যদি ভারত সহায়তা না দিতো বা তাদের সাথে যদি সুসম্পর্ক না থাকতো।
দু’টি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তুলনা : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, চীনের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, তা কি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সাথে সাংঘর্ষিক নয়? এছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলোর চাপও তো আছে চীনের সাথে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে। কিভাবে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়টির মোকাবেলা করবেন?
হাছান মাহমুদ উত্তর দেন, ‘ভারতের সাথে আমাদের যা সম্পর্ক, তার সাথে অন্য কোনো দেশের সাথে সম্পর্কের কোনো তুলনাই চলে না। কারণ, আমাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক।’ মাহমুদ বলেন, ‘ভারতের মানুষ, ভারতের সৈন্যরা রক্ত দিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ভারত তার সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে ১০ মিলিয়ন মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। তাই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের সাথে অন্য কোনো দেশের সাথে সম্পর্কের তুলনা করা যায় না।’
আবার চীন যে বাংলাদেশর উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাথী, সেটাও উল্লেখ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের উন্নয়নের সাথী। তারা আমাদের পাশের দেশ না হলেও প্রতিবেশী।’
‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা কমে আসছে : এক সাংবাদিক মাহমুদের কাছে জানতে চান ইন্ডিয়া আউট প্রচারণা সম্পর্কে।
জবাবে মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দলের বদনাম আছে বাংলাদেশে যে আমরা ভারতপন্থী দল। কিন্তু এই ওষুধটা আর কাজ করে না। কিন্তু ভারত-বিরোধী লোকজন তো রয়েছে বাংলাদেশে।’
মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আসলে বাংলাদেশপন্থী দল। ভারত বিরোধী অংশ তো আছে দেশে। তারা এই ইস্যুটাকে তোলে ভোটের সময় এবং মাঝে মাঝে তারা ভারত বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে চায় একটা অংশের মানুষের মনে। কিন্তু ভারত বিরোধী মনোভাব ক্রমশ কমে আসছে। একটা বিরাট সংখ্যক মানুষ বোঝেন যে বাংলাদেশের উন্নতির জন্য ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রাখা উচিত। পুরো অ লের উন্নতির জন্যই প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রাখা উচিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সেটাই বিশ্বাস করে।’
তার কাছে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে বাংলাদেশের রাস্তায় ভারত-বিরোধী স্লোগান লেখা হচ্ছে, ভারতীয় সামগ্রী বিক্রি করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। আপনারা কী ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করছেন?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা মুক্ত সমাজ। বহুত্ববাদী দেশ, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। যে কেউ যা খুশি বলতেই পারে। তাই ভারত বিরোধী, চীন বিরোধী, যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী, ইউরোপ বিরোধী, পাকিস্তান বিরোধী-নানা স্লোগান লেখা হয় দেওয়ালে, পোস্টারে। কিন্তু এইসব ভারত বিরোধী স্লোগান আগের মতো কাজ করে না আর।’

ভোটের সময়ে ‘পাশে থাকার’ জন্য ভারতকে ‘ধন্যবাদ’ : মাহমুদ তার প্রারম্ভিক মন্তব্য শুরুই করেছিলেন বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গ দিয়ে। সে কথা বলতে গিয়েই তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ঠিক পরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে অভিনন্দন বার্তা গিয়েছিল। এ ব্যাপারে ভারতের জনগণ, নাগরিক সমাজ আর সরকারকে আমরা ধন্যবাদ দেব বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পাশে থাকার জন্য, একটা অংশ গণতন্ত্রকে বিঘিœত করার যে চেষ্টা করেছিল, তার মোকাবেলা করার জন্য।’
মাহমুদ ভারতকে শুধু যে সাম্প্রতিক নির্বাচনের প্রসঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তা নয়। তিনি বলেন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়কালে নানা ক্ষেত্রে যে প্রভূত উন্নতি হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক সব থেকে ভাল হয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে ভারত পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তা করায় আর ভারতের সাথে সুসম্পর্কের কারণে।
‘তিস্তা নিয়েও কথা হয়েছে’ :হাছান মাহমুদ জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে তার বৈঠকে যে তিস্তা নদীর পানি বন্টন নিয়ে কথা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তো কোনো আপত্তি নেই, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আপত্তি উঠেছিল। এখানে তো নির্বাচন আসছে, পরের মাসেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে, ভোট হবে এপ্রিল-মে মাসে। জয়শঙ্করের সাথে কথা হয়েছে যে বিষয়টি নিয়ে আমরা ভোটের পরে আলোচনা করবো। আমরা নিশ্চিত যে একটা সমাধান আসবে।’

সীমান্ত হত্যা : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে তার প্রারম্ভিক মন্তব্যের সময়েই বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক অনেক বিষয় নিয়েই তার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আলোচনা হয়েছে।’ পরে তাকে প্রশ্ন করা হয় সীমান্ত হত্যা এবং সপ্তাহ দু’য়েক আগে ভারতের সীমানার ভেতরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্যের হত্যার বিষয়ে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে আলোচনায় এ বিষয়টি এসেছিল কি-না? সেটাও জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে মাহমুদ বলেন, ‘হ্যা, বিষয়টা নিয়ে আমার সাথে আলোচনা হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। মারণাস্ত্র নয়, এমন বন্দুক সীমান্ত রক্ষীদের ব্যবহার করতে পারার সম্ভাবনা কতটা তা নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে।’
মাহমুদ বলেন, ‘ওই হত্যার পরে ভারত ক্ষমা চেয়েছে। আমরা খতিয়ে দেখছি বিষয়টি, আলোচনা করছি। ওই হত্যার ঘটনার তদন্তও তো হচ্ছে।’ শুধু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে নয়, বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সীমান্তের ঘটনাবলী নিয়েও যে তার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে, সেটাও এক প্রশ্নের জবাবে জানান তিনি। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com