অতীত বরাবরই সুন্দর। আর যেই অতীতে সাকিব আল হাসান আছেন, সেই অতীতটা গর্বেরও বটে। আগামী প্রজন্মকে বুক ভরা অহংকারে মাথা উঁচু করে বলা যাবে, ‘আমাদের যখন কিছু ছিল না, তখন একজন বিশ্বসেরা ছিল।’ ভবিষ্যতে পরে আসা যাক। বর্তমানে আসলে অবশ্য আক্ষেপের সুরটাই বড় হয়ে বাজে। ধীরে ধীরে যে না ভাবতে চাওয়া বাস্তবতাগুলো সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে, না শুনতে চাওয়া গল্পগুলো বাধ্য হয়েই শুনতে হচ্ছে। শুনতে হচ্ছে সাকিব আল হাসানও ফুরিয়ে যাচ্ছেন। এ যেন সময়ের নিয়তি। সময়! সময় এমনি। কারো জন্য অপেক্ষায় থাকে না, কেউ বেঁধে রাখতে পারে না। যদি রাখা যেত, তবে হয়তো আবেগী বাঙালি ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারিতে আটকে রাখতো সময়টা। আহা, কি উচ্ছ্বাস ভরা ছিল সেই দিনটা! শত হাহাকার আর আক্ষেপ ঘুচানো সেই সুন্দর বিকেল। বহু বছরের সাধনার পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ওই দিনে। সত্য হয়েছিল কোটি প্রাণের আরাধনা। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়েছিলো উঁচু শিরে। যার সবটাই ছিল সাকিবকে ঘিরে। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় বিশ্বসেরার সিংহাসনে সমাসীন হন তিনি। উঠে আসেন অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। যা হোক, এরপর আরো কত শত অর্জন নিজের করে নিয়েছেন। তিন ফরম্যাটেই একসাথে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখলে নিয়েছেন। আরো কতো প্রাপ্তিই না এনে দিয়েছেন দেশকে, সমৃদ্ধ করেছেন দেশের ক্রিকেটকে। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই। তবে এবার যে বেলা শেষের গান বাজতে শুরু করেছে। সোনালী সূর্যের অস্ত যাবার কালে বিষন্ন বিকেলের দেখা মিলেছে। সময় সাকিবকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক বাস্তবতায়। যেখানে সবার আগে হারাতে হলো নেতৃত্বটাই।
সাকিব যে মস্তিষ্কের খেলায় আর অভিজ্ঞতায় বরাবরই সবার সেরা, এটা সময়ে সময়ে অনেকেই বলে গেছেন। বিসিবিরও তেমনটাই বিশ্বাস। যদিও নানা কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য নেতৃত্ব উঠেনি কাঁধে। এবার যখন সম্ভাবনা ছিল, তখন বাঁধ সাধলো চোখের চোট। তাছাড়া বয়সটাও তো কম হয়নি। সব কিছু বিবেচনায় সাকিবকে মুক্ত করে দিয়েছে বিসিবি। সোমবার বোর্ড সভা শেষে সাকিবের থেকে তিন ফরম্যাটের নেতৃত্বই নিয়ে নেয় তারা, যে দায়িত্ব এসে পড়ে নাজমুল হোসেন শান্তর কাঁধে। ফলে হয়তো আর কখনোই জাতীয় দলের জার্সিতে টস করতে দেখা যাবে না সাকিব আল হাসানকে। আর কখনোই দেখা যাবে না নেতৃত্ব দিতে।
বলা যায়, অধিনায়ক সাকিবের পরিসমাপ্তি ঘটে গেছে। সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে দলকে ৬২ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। যেখানে জয় ২৭ ম্যাচে, হারের পাল্লা ভারি ৩৪ পরাজয়ে। ১৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে চারবার জিতিয়েছেন দলকে, বাকি ১৫ ম্যাচে হার। আর ৩৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয় নয়টি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফি বিন মর্তুজার সহ-অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। সেই সফরে মাশরাফি ইনজুরিতে পড়ায় সাকিবকে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয়। সেটাই ছিল নেতা সাকিবের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে নেতৃত্ব দেয় বিসিবি।
প্রথম দফায় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রায় দুই বছর। ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরের পর অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এই অলরাউন্ডারকে। এর ৬ বছর পর ২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজা টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গেলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট দিয়ে আবারো নেতৃত্বে ফেরেন সাকিব। একই বছরে মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সাদা পোশাকের অধিনায়কের দায়িত্বও পান তিনি। কিন্তু ২০১৯ সালে আইসিসি কর্তৃক এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে দ্বিতীয় দফায় নেতৃত্ব হারান। এরপর সময়ের সাথে সাথে টেস্ট, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে নেতৃত্বও ফিরে পান সাকিব। ২০১৭ সালে সাকিবের হাত ধরে তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এর প্রায় ৬ বছর পর গত আগস্টে সাকিবের হাত ধরে এক অধিনায়ক তত্ত্বে ফিরে যায় টাইগাররা। এবার একসাথে তিন ফরম্যাট থেকে দায়িত্ব ছাড়ায় সাকিবের নেতৃত্ব অধ্যায়ের ইতি ঘটলো।