সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
সদরপুরে বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন সোনালী আঁশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হাজী দিদার পাশার পক্ষে আলোচনা সভা পঞ্চগড়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণের বদলীর দাবীতে মানববন্ধন নগরকান্দায় ভূত আতংকে অসুস্থ হয়েছে শিক্ষার্থীরা ডিমলায় ১০০ পরিবারের মাঝে ঢেউটিন ও অর্থ বিতরণ ভয় পাবার কোন কারণ নাই, আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতার সমাধিতে যুব লীগের চেয়ারম্যানের শ্রদ্ধা নিবেদন টিয়া পাখির মতো আপনাদের কাছে প্রিয় হয়ে থাকতে চাই-সাংবাদিক বাবু পলাশবাড়ী উপজেলা দলিল লেখক সমিতির ত্রি বার্ষিক নির্বাচন কুয়াকাটায় মধ্যরাত থেকে শুরু মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা

শাবানে আধ্যাত্মিক পরিচর্যা

খাদিজা বিনতে জহির সুমাইয়া
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

রজব থেকে প্রতীক্ষার পর শাবান পেরিয়ে পশ্চিমাকাশে উদিত রমাদানের একফালি চাঁদকে বিশ্বের মুসলিমবাসী সানন্দে-আবেগে উদ্বেলিত হয়ে স্বাগত জানায়। রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের দিনগুলো কিভাবে প্রোডাক্টিভভাবে কাজে লাগিয়ে নেক আমলের পাল্লা ভারী করে নেয়া যায়, সেই প্রস্তুতি-পরিকল্পনা শুরু হোক এখনই, শাবান থেকেই!
কুরআন তিলাওয়াত শুদ্ধিকরণ : রমাদান কুরআন নাজিলের মাস। রমাদানের অন্যতম প্রধান নফল ইবাদত হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত করা। কুরআন তিলাওয়াতের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে, সহিহভাবে তাজউইদ আদায় করে কুরআন তিলাওয়াত করা। দুনিয়াবি ব্যস্ততার অজুহাতে সহিহভাবে যাদের কুরআন শেখা হয়নি, স্বাভাবিকভাবেই তাদের সাথে কুরআনের যোজন-যোজন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্ব কাটিয়ে এবারের রমাদানে কুরআনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এখন থেকেই তাজউইদ শিখনের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত। হয়তো রমাদানের আগে পুরো কুরআন সহিহ করা সম্ভব হবে না, তাজউইদের নিয়ম-কানুনগুলো যথার্থভাবে শেখা কষ্টকর হয়ে যাবে; কিন্তু এখন থেকেই যদি শুরু করা যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ আগামী বছর রমাদানেই ‘সহিহভাবে তিলাওয়াতের’ স্বাদ আস্বাদন করা সম্ভব হবে।
অনুবাদ ও তাফসির অধ্যয়ন : আমাদের মধ্যে যারা কুরআন সহিহভাবে পড়তে পারি, আমরা রমাদানের পুরো সময়টাতেই কুরআন খতমের ওপর জোর দিয়ে থাকি। এবারের রমাদানে খতমের পাশাপাশি একটু ভিন্ন পরিকল্পনা সাজান। প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময় কুরআনের অনুবাদ চর্চার প্রস্তুতি নিন। অনুবাদ পড়ে যখন কুরআনের অর্থ অনুধাবন করতে পারবেন, তখন নিশ্চিতভাবে এর ব্যাখ্যাও জানতে ইচ্ছা করবে। ব্যাখ্যা জানার জন্য প্রসিদ্ধ-গ্রহণযোগ্য তাফসির এখনই সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। এতদিন অন্ধের মতো যে তিলাওয়াত করতেন, এই রমাদানে যদি সেই তিলাওয়াতের সাথে অনুবাদ ও তাফসিরের সমন্বয় ঘটাতে পারেন, তাহলে অবশ্য অবশ্যই কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আপনি আগের চেয়ে কয়েক শ’ গুণ বেশি প্রশান্তি লাভ করতে পারবেন।
তাহাজ্জুদে স্রষ্টার সান্নিধ্য অন্বেষণ : সময়মতো উঠতে না পারার কারণে তাহাজ্জুদ আদায় করা সম্ভব হয় না, সারা বছর এই অজুহাত গ্রহণ হলেও রমাদানে কোনোভাবেই এটা মেনে নেয়া যায় না। এখন একটা ট্রেন্ড প্রচলিত আছে, সারা রাত জেগে থেকে একেবারে সাহরি খেয়ে ঘুমানো। আর এই তিন-চার ঘণ্টা অনর্থক জেগে থাকার জন্য আমরা বিভিন্ন মুভি-টিভি সিরিজ দেখে সময় কাটাই! নাউজুবিল্লাহ, একটা সুন্নাত পালনের জন্য আমাদেরকে কেন আরেকটা ‘হারাম’ কাজে লিপ্ত হতে হবে? এদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক মানুষই আছেন, যারা সাহরি খাওয়ার আগ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ আদায় করে নেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সারা রাত অনর্থক-হারাম কাজে লিপ্ত থাকার পর শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আমরা কার সাথে উপহাস করছি? তাই এখন থেকেই অনর্থক রাত জাগার অভ্যাস কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।
রমাদানের এক মাস যেন চার রাকাত-আট রাকাত তাহাজ্জুদ কোনোভাবেই মিস না হয়, সেটি নিশ্চিতকরণের পূর্বপ্রস্তুতি শাবান মাস থেকেই শুরু করা দরকার।
চব্বিশ ঘণ্টার প্রোডাক্টিভ রুটিন : রমাদানের প্রত্যেকটা বরকতপূর্ণ মুহূর্ত কিভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই পরিকল্পনা কখনোই রমাদান ‘শুরু হওয়ার পর’ করা যাবে না। শুধু একটি গঠনমূলক রুটিনের অভাবে আমাদের রমাদানের অঢেল বারাকাহ থেকে বি ত হতে হয়। সাহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত এবং ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত কখন কী করব, দুনিয়াবি কর্মব্যস্ততায় কয় ঘণ্টা ব্যয় করব, কয় ঘণ্টা ঘুমাব, অবসর সময়ে কিভাবে বিশ্রামের পাশাপাশি ইবাদতে লিপ্ত থাকতে পারব, কুরআন তিলাওয়াত কতক্ষণ করব, কিয়ামুল লাইল কতক্ষণ সময় নিয়ে আদায় করব- এরকমভাবে প্রত্যেকটি ইন্ডিভিজুয়ালি মিনিটের পরিকল্পনা শাবান মাস থেকেই সাজানো শুরু করা উচিত।
জাকাতের হিসাব ও প্রদানের প্রস্তুতি : জাকাত একটি আর্থিক ইবাদত। ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে সাধারণ জনগণের কাছে ‘জাকাত’ প্রসঙ্গেই সবচেয়ে কম আলোচনা হয়। অথচ নামাজ-রোজা-হজের মতো সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য এটিও একটি ফরজ ইবাদাত। এরকম অসংখ্য ব্যক্তি আছে যাদের জাকাত সম্পর্কে কোনো স্বচ্ছ ধারণাই নেই, অথচ বছরের পর বছর ধরে তাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়ে আছে। আবার অনেকেই আছেন, সব সম্পত্তির যথাযথ হিসাব না করে রমাদান এলে নিজের ইচ্ছামতো একটি টাকার অঙ্ক জাকাত হিসেবে দান করে দেন। এর মাধ্যমে ওই ব্যক্তি শুধু দানের সাওয়াব পাবেন; কিন্তু তার ফরজ ইবাদত জাকাত আদায় হবে না। তাই নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদের এখন থেকেই উচিত, কোনো বিশেষজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হয়ে সমুদয় সম্পদের যথার্থ হিসাব করে জাকাতের অঙ্কটা আলাদা করে রাখা এবং এই জাকাতের অর্থ শরিয়ত নির্ধারিত কোন কোন খাতে ব্যয় করতে হবে, সে সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা লাভ করা।
সর্বোপরি, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদেরকে সবধরনের নিন্দিত ও অনর্থক কাজ থেকে হেফাজত করে পরিকল্পনামাফিক নেক আমল করার মাধ্যমে এই রমাদানকে প্রত্যেকের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রমাদান হিসেবে সাজিয়ে তোলার তাওফিক দিক। লেখক : শিক্ষার্থী ও লেখিকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com