গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে সরকার অবশ্যই পরিবর্তন হবে এমন প্রত্যাশা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, মজলুমদের ফরিয়াদ কখনো বৃথা যায় না।
কারাবন্দী অবস্থায় মারা যাওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলের পরিবারের সাথে গোপীবাগের বাসায় গতকাল শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই মন্তব্য করেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন চাই এবং বিশ্বাস করি এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, অবশ্যই হবে ইনশাআল্লাহ।’
‘রাজনৈতিক কর্মসূচি বিভিন্ন সময়ের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের হয়। আমরা অনেক আন্দোলনে বিজয়ী হয়েছি, স্বৈরাচার এরশাদ পতনের আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হয়েছি, ওয়ান-ইলেভেন সরকার জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচন করতে চেয়েছিল আমাদের বাধার মুখে পারে নাই। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছি। এই বিএনপি বাকশালের (একদলীয় শাসন ব্যবস্থা) গোরস্থানের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, এই বিএনপি সামরিক স্বৈরশাসনের অবসানে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কাজেই এই বিএনপি ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে আবারো বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে,’ বলেন তিনি।
সরকার পরিবর্তনের একদফার যুগপৎ আন্দোলন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলন করছি, সেই যুগপৎ আন্দোলন এখনো চলছে। তারা আমাদেরকে অভিযুক্ত করে যে আমরা আন্দোলনে আর পারতেছি না। কয় বছর হয়েছে? বিএনপি ক্ষমতার বাইরে ১৭ বছর। আরো ১০-১২ বছর আগে থেকে বলতেছে যে বিএনপির কোমর ভাঙ্গা, বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। তারা (আওয়ামী লীগ) ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছে। তাদের কি কোমর ভাঙ্গা ছিল না? সোজা ছিল?’
তিনি আরো বলেন, ‘যাদের ২১ বছর লাগে ক্ষমতায় আসতে তাদের এই অভিযোগ করার কোনো অধিকার নাই যে বিএনপি পারে না। ২২ বছরের সময়ে যেন বলে। তার আগে না। আমরা বলব তাদেরকে যেকোনোভাবেই হোক ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন আপনারা সুশাসন দেনৃ এভাবে কোনো বোন, এভাবে কোনো ভাই যেন আর্তনাদ না করে। কেউ অপরাধ করলে নিশ্চয় তার শাস্তি হবে, কিন্তু এটা কি?’
বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়নের কথা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটা কোন দেশ, এজন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি? আপনি যেকোনো সময়ে না জানিয়ে কাউকে উঠিয়ে নিয়ে যাবেন। যেখানে সেখানে ফেলে রাখবেন, চিকিৎসা দেবেন না, অসুস্থ মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে- এটা কোনো রাষ্ট্রের নীতি হতে পারে না। একটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা দায়িত্বে আছে তাদের একটা কর্তব্য আছে। কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করা হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘অত্যাচার-নিপীড়ন এভাবে চলতে পারে না। যদি চলতো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হতো না। যদি অত্যাচারীরা চিরদিন অত্যাচার করতে পারত তাহলে ফেরাউন-নমরুদের পতন হতো না, হিটলার-মুসলিনের পতন হতো না। নিশ্চয় পতন হয়েছে এবং যারা মজলুম তাদের ওপর যে নিপীড়ন করা হয়েছে এর বিচার হবে। আমরা তাদের রক্তের বিনিময়ে, তাদের প্রাণের বিনিময়ে এদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব ইনশাআল্লাহ। আমরা নিজেরাও চেষ্টা করব এবং যারা মজলুম কষ্টে আছেন তাদের যে ফরিয়াদ কখনো বৃথা যায় না, যাবে না।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। জনগণ যেন এ ধরনের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে মুক্তি পায়, সরকার যেন সহায়তা করে, পুলিশ যেন জনগণের সেবা করে সেই রকম একটা সমাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করব।’ গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর গোপীবাগে কারাগারে নিহত বিএনপি নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলের বাসায় যান নজরুল ইসলাম খান। তিনি তার ভাই, দুই বোনের সাথে কথা বলেন এবং বুলবুলের নির্মমভাবে মারা যাওয়ার ঘটনা শুনেন।
এভাবে ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলের মৃত্যুকে ‘হত্যাকা-’ হিসেবে অভিহিত করে এহেন ঘটনা নিন্দা ও বিচার দাবি জানান নজরুল ইসলাম খান। তিনি জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা ব্লুবুলের পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছেন। বিএনপি তার পরিবারের পাশে থাকবে বলেও জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর গ্রেফতার হন বুলবুল। ২৪ নভেম্বর কাশিমপুর কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আনার পর দায়িত্বরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।