কিশোর গ্যাং বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাব। এ সময় ৭ গ্রুপের দলনেতাসহ ৩৭ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র্যাব-১ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কর্মকর্তারা। র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার মহাখালী, বনানী, বিমানবন্দর, টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে ৭ গ্রুপের দলনেতা আল-আমিন, জাউরা গ্রুপের দলনেতা মাহাবুব, বাবা গ্রুপের দলনেতা সাদ, ভোল্টেজ গ্রুপের মনা, ডি কোম্পানির (লন্ডন পাপ্পু চালায়) আকাশ ও আমির হোসেন গ্রুপ, জাহাঙ্গীর গ্রুপ ওরফে বয়রা জাহাঙ্গীর গ্রুপসহ বিভিন্ন কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম গাজা, ২৪টি মোবাইল ফোন, ১টি ব্লেড, ১টি কুড়াল, ১টি পাওয়ার ব্যাংক, ৫টি রড, ১৬টি চাকু, ৩টি লোহার চেইন, ১টি হাতুড়ি, ১টি মোটরসাইকেল এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রত্যেক গ্রুপের আনুমানিক সদস্য ১০/১৫ জন। তারা টাকার বিনিময়ে যে কোনো পক্ষের হয়ে মারামারি, দখলবাজি, পিকেটিং, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল বলে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র, ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাব জানায়, বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং, গ্যাং কালচার, উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হয়ে হাতাহাতি-মারামারি করে। এ ছাড়াও, তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রুপের সাথে প্রায়ই কোন্দলে লিপ্ত থাকে। তাদের এই ধরনের চলাফেরার কারণে সাধারণ লোকজন তাদের অনেকটাই এড়িয়ে চলে। এড়ানোর বিষয়টিকে তারা তাদের ক্ষমতা ভাবে এবং কোন ঘটনায় কেউ কোনও প্রতিবাদ করলেও ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
র্যাব-১ এর গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর মহাখালী, বিমানবন্দর, বনানী, গাজীপুর ও টঙ্গী থানাধীন এলাকায় কতিপয় কিশোর গ্যাং’র কার্যক্রমসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নামে পেশীশক্তি প্রদর্শন করে আসছে। তারা মাদক সেবন, সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকট শব্দ করে জনমনে ভীতির স ার, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিশ্চিত ক্ষতির মুখে যাচ্ছে। এ কারণে অভিভাবকদের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।