শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন

যেসব কারণে মানুষ দ্বিনি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়

আলেমা হাবিবা আক্তার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ড. সালেহ বিন সাআদ কাহতানি দ্বিনি ইলম তথা ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়ার সাতটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তা হলো:
১. অসৎ নিয়ত : ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের মূল উদ্দেশ্য হবে শরিয়তের বিধি-বিধান জেনে তা পালন করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। কিন্তু মানুষ যখন পার্থিব খ্যাতি, অর্থ উপার্জন, আলেমদের সঙ্গে বিতর্ক করা ও নেতৃত্ব লাভের মতো জাগতিক উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করে, তখন আল্লাহ তাকে দ্বিনি ইলম থেকে বি ত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে আরববাসী! তোমাদের ব্যাপারে আমি শিরক ও গোপন লিপ্সাকে যতটা ভয় পাই অন্য কিছুকে তেমন ভয় পাই না। (সিলসিলাতুস সহিহা, হাদিস : ৫০৮)। আল্লামা ইবনে আসির (রহ.) বলেন, গোপন লিপ্সা হলো নেক আমলের প্রচার কামনা করা। (আন নিহায়া : ২/৫১২)
২. সামাজিক মাধ্যম : বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের দ্বিনি ইলম থেকে বি ত হওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা সামাজিক মাধ্যমের অসংযত ব্যবহার মানুষকে নানা পাপের পথ দেখায়। আর পাপ দ্বিনি ইলমের অন্তরায়। তা ছাড়া সামাজিক মাধ্যম প্রচুর সময় নষ্ট করে। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘সময় অপচয় করা মৃত্যুর চেয়েও গুরুতর। কেননা মৃত্যু তোমাকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। আর সময়ের অপচয় তোমাকে আল্লাহ ও পরকাল থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। ’ (কিতাবুল ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ৩১)
৩. অহংকার : অহংকার ও অহমিকা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। ফলে মানুষ ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দুর্বলতা দেখতে পারে না এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের চেষ্টাও করে না। এ ছাড়া অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর ক্রোধের পাত্র। আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে দ্বিনি ইলম দান করেন না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা কোরো না, তিনিই সম্যক জানেন মুত্তাকি কে। ’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩২)
৪. পাপ কাজে লিপ্ত থাকা : জ্ঞান হলো আল্লাহর নুর বা জ্যোতি। আল্লাহ নিজের জ্যোতি তাকেই দান করেন যে পাপ-পঙ্কিলতার অন্ধকার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। এ ক্ষেত্রে ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর বিখ্যাত কবিতাটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। যাতে তিনি বলেছেন, আমি আমার শিক্ষক ওয়াকির কাছে দুর্বল স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করলাম। তিনি আমাকে পাপ পরিহারের পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন, জেনে রেখো, ইলম হলো আল্লাহর নুর এবং আল্লাহ তার নুর কোনো পাপীকে দেন না।
৫. হতাশা : মানুষ যখন বড় বড় মনীষী ও আলেমদের জীবনী পড়ে, তখন তার ভেতর হতাশা তৈরি হয়। তারা বলে এত অধ্যবসয়, চেষ্টা ও শ্রম তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং ধর্মীয় জ্ঞানার্জন করা আমার কাজ নয়। তাদের জন্য আল্লাহর সুসংবাদ হলো, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সংগ্রাম করে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, পৃষ্ঠা ৬৯)। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জ্ঞান অর্জিত হয় শেখার মাধ্যমে। (দারাকুতনি, হাদিস : ২০৩৭)। অর্থাৎ হতাশা ঝেড়ে ফেলে কেউ যদি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করে, তবে আল্লাহ তার জন্য সহায় হন।
৬. কালক্ষেপণ : অনেকে দ্বিনি ইলম অর্জনে কালক্ষেপণ করে। জীবনের প্রতিটি ধাপে পৌঁছার পর সে পরবর্তী ধাপের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এভাবে একদিন তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়ে যায়। বস্তুত এই পরকালের ওপর পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছে। শৈশবে ও কৈশোরে জাগতিক শিক্ষা, যৌবনে আনন্দ-ফুর্তি এবং বার্ধক্যে ঘরসংসারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই শ্রেণির প্রতি আল্লাহর হুঁশিয়ারি হলো ‘কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও, অথচ আখিরাতই উৎকৃষ্টতর এবং স্থায়ী।’ (সুরা : আ’লা, আয়াত : ১৬-১৭)
৭. সুনির্দিষ্ট মতবাদঅন্ধত্ব : যখন কেউ কোনো সুনির্দিষ্ট মতবাদ ও চিন্তার দাসত্ব করে, তখন তার পক্ষে ধর্মীয় জ্ঞানের কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছানো সম্ভব নয়। কেননা তা ব্যক্তির চিন্তাশক্তির ভারসাম্য নষ্ট করে। যে ব্যক্তি ইসলামের সঠিক শিক্ষা লাভ করতে চায়, তাকে মানুষের অন্ধ অনুসরণ বাদ দিয়ে আকাবির-আসলাফের নীতি অনুসরণ করতে হবে। তার চিন্তা ও বিশ্বাসে হবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী।(মাদারিজুত তালাব, পৃষ্ঠা ৯২) আল্লাহ সবাইকে তার জ্ঞান দান করুন। আমিন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com