শবেবরাত তথা আরবি শাবান মাসের অর্ধেক দিন চলে গেছে। তাই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণে আর বিলম্ব করার কোনো সুযোগ নেই। বস্তুত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিরা রজব মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। শাবান মাস এলে সেই প্রস্তুতি আরো বেগবান হতো। মহানবী (সা.) শাবান মাসে অধিক পরিমাণ রোজা রাখতেন। কেননা শাবান হলো রমজান মাসে প্রবেশদ্বার।
শাবানের শেষ ভাগ গুরুত্বপূর্ণ: শাবান মাসের শেষ ভাগ মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ রমজান মাসকে আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র বানিয়েছেন।
এতে কেউ সফল হয় আবার কেউ ব্যর্থ হয়।…(তোমরা যেন প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে সফল হতে পারো) তাই তোমাদের প্রতি আমার উপদেশ হলো শাবানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে সুবর্ণ সুযোগ মনে কোরো। বিশেষত শাবানের অর্ধরাত ও তার পরবর্তী দিনগুলো। (বুগয়াতুল ইনসান, পৃষ্ঠা ৯১)
শাবান মাসে পূর্বসূরিদের আমল: আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) শাবান মাসে পূর্বসূরি আলেমদের আমল সম্পর্কে লেখেন, ‘পূর্বসূরিদের কাছে শাবান মাস ছিল রমজানের ভূমিকাস্বরূপ।
তারা শাবান মাসে সেসব আমল শুরু করে দিতেন, যা রমজানে করা হয়। যেমন—রোজা রাখা ও কোরআন তিলাওয়াত করা। যেন রমজান লাভের আগ্রহ তৈরি হয় এবং মন আল্লাহর আনুগত্যের জন্য প্রস্তুত হয়।’ (নিদাউর রাইয়ান, পৃষ্ঠা ৪৮০)
যেভাবে প্রস্তুতি নেবে: মুমিন নিম্নোক্ত কাজের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
১. প্রবল আগ্রহে অপেক্ষা : রমজান লাভ করা এবং রোজা পালনকারীর জন্য আল্লাহর ঘোষিত পুরস্কার লাভে মুমিন সর্বদা প্রবল আগ্রহ বোধ করবে, প্রবল আগ্রহ নিয়ে রমজানের জন্য অপেক্ষা করবে।
পূর্বসূরি আলেমরা তেমনটিই শিক্ষা দিয়েছেন। মুআল্লা ইবনুল ফদল (রহ.) বলেন, পূর্বসূরি আলেমরা ছয় মাস রমজান লাভের দোয়া করতেন এবং ছয় মাস তা কবুলের দোয়া করতেন। (বুগয়াতুল ইনসান, পৃষ্ঠা ৮৯)
২. দোয়া করা : মুমিন রমজান মাস লাভের জন্য বেশি বেশি দোয়া করবে। কেননা নবীজি (সা.) রমজান লাভের দোয়া করতেন। নবীজি (সা.) রজব মাসের শুরু থেকে দোয়া করতেন—হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।(মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৩৬৯)
৩. বিধি-বিধান জানা : রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হলো রমজান ও রোজার বিধি-বিধান জানা। কেননা ফকিহরা এই বিষয়ে একমত যে, ফরজ ইবাদতের বিধি-বিধান জানাও ফরজ। রমজানের রোজা ফরজ তাই এর বিধান জানাও ফরজ। (ইসলাম ওয়েব ডটনেট, প্রশ্ন নম্বর ৬৬০৪৫)
৪. গুনাহ ত্যাগ : রমজান মাসের রোজা পালনের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য নিজেকে পাপমুক্ত করা। পাপ পরিহার না করলে ব্যক্তি রমজানের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। তাই মুমিন রমজানের আগেই গুনাহ ত্যাগ করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)
৫. রমজানের পরিকল্পনা গ্রহণ : মুমিন রমজান মাসের ফল ও ফসল ঘরে তুলতে আগে থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কেননা সুষ্ঠু পরিকল্পনা ব্যক্তির সাফল্য লাভে সহায়ক। যেমন ঘরবাড়ির কাজ, বাজার-ঘাটের কাজ, অফিস ও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাজ গুছিয়ে রাখা।
অন্যকেও প্রস্তুত করা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবি আনাস বিন মালিক (রা.) বলতেন, ‘শাবান মাস এলে মুসলমানরা কোরআনকে আঁকড়ে ধরত এবং তা পাঠ করত। তারা সম্পদের জাকাত প্রদান করত। যেন দুর্বল ও অসহায় মানুষ রমজানের রোজা রাখতে সক্ষম হয়।’ (মিনারুল ইসলাম : ১৪/২১)
উদাসীনতা নিন্দনীয়: শাবান মাসের ব্যাপারে মুমিনের উদাসীনতা নিন্দনীয়। উসামা বিন জায়েদ (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোজা রাখতে দেখি, বছরের অন্য কোনো মাসে সে পরিমাণ রোজা রাখতে দেখি না। তিনি বললেন শাবান মাস রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস, যে মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ খবর রাখে না, অথচ এ মাসে আমলনামাগুলো আল্লাহর কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি, আমার আমলনামা আল্লাহর কাছে উত্তোলন করা হবে আমার রোজা পালনরত অবস্থায়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩৫৮) আল্লাহ সবাইকে রমজান লাভের তাওফিক দিন। আমিন।