গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এতে এক সপ্তাহেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর মাধ্যমে টানা তিন সপ্তাহের পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন ১১ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে।
বাজার মূলধন ও মূল্য সূচক কমলেও লেনদেনের গতি কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৪ শতাংশের ওপরে। অপরদিকে প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ১৯ পয়েন্টের বেশি। দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে প্রায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩২টির। আর ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬২ হাজার ১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ২৯১ কোটি টাকা বা দশমিক ১৭ শতাংশ।
আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে কমে ৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এতে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমলো ১১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। এদিকে, ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৬২ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৮ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ তিন সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকটি কমেছে ১১৮ দশমিক ৮২ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ১২ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৬০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৭ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৮১ শতাংশ। আর ইসলামী শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২১ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
সবকটি মূল্য সূচক কমলেও লেনদেনের গতি কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৭৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮৪২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা ৪৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৫০৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৩ হাজার ৩৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১৩৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সেন্ট্রাল ফার্সামিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেস্ট হোল্ডিংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ১২৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং সিরামিক।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, ওরিয়ন ইনফিউশন, ফরচুন সুজ, মুন্নু ফেব্রিক্স, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, জেমিনি সি ফুড, বিডি থাই অ্যালুমেনিয়াম এবং লাভেলো আইসক্রিম।