আসন্ন রমজানের আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতির ইস্যুতে হামাস এবং ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসে যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। তবে এখনো এই আলোচনার কোনো সুরাহা করতে পারেনি তারা। ফিলিস্তিনের ওই অ লটিতে যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এপি। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, রমজানের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও গাজা ইস্যুতে এখনো কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। যুদ্ধবিরতির এ জোর প্রচেষ্টার মধ্যেও থেমে নেই ইসরায়েলের হামলা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় গাজার বিভিন্ন অ লে তেল আবিবের হামলায় নিহত হয়েছেন ৯৭ ফিলিস্তিনি।
পাঁচ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের আকাশ ও স্থল হামলায় অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বেশির ভাগ স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়। জ্বালানি ও বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালে মিলছে না চিকিৎসা সেবা। এতে প্রাণ হারাচ্ছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শিশুরা। এছাড়া গাজার উত্তরা লে তেল আবিবের হামলা জোরদার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে এপি। এক্ষেত্রে গাজায় আরো মানবিক সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, আমাদের অবশ্যই গাজায় আরো সাহায্য পাঠাতে হবে। এখানে কোনো অজুহাত চলবে না। ত্রাণ সহায়তাকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় গাজায় ত্রাণ পাঠাতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে তারা। এছাড়া গাজার অধিকাংশ অ লে ইসরায়েলি হামলার ফলে ত্রাণবাহি ট্রাক সহায়তা পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।
সাগরপথে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি: সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সাগরপথে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরাইল। গতকাল বুধবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১৩ জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো সাগরপথে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরাইল।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে- সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়ন এবং সরবরাহে এই সহায়তা প্রদান করা হবে। সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে মানবিক সহায়তা বোঝাই একটি জাহাজ প্রথমে সাইপ্রাসে পাঠাবে। এরপর ইসরাইলি প্রতিনিধিরা মানবিক সহায়তার জাহাজ পরীক্ষা করে গাজার সৈকতে নিয়ে যাবেন ও সববরাহ করবেন।
চ্যানেল-১৩ আরো জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত অনুরোধ করেছে যে- এই সাহায্যের প্রথম ট্রায়াল যেন আগামী সপ্তাহ থেকে অর্থাৎ শুরু হওয়া রমজান মাসের আগে করা হয়। এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘অবরুদ্ধ এ ভূখণ্ডে ইসরাইলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে লড়াইয়ে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার ৬৩১ জনে দাঁড়িয়েছে।’ গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ইসরাইলি হামলায় নতুন করে ৯৭ জন নিহত হওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজার ৬৩১ জনে দাঁড়ালো।’ গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজা উপত্যকায় আরো ৭২ হাজার ৪৩ জন আহত হয়েছে। এর আগে সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর গাজার হাসপাতালগুলোতে শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে। একটি ত্রাণ মিশন সেখানকার দু’টি হাসপাতালে অনাহারে শিশু মৃত্যুর ভয়াবহ চিত্র প্রত্যক্ষ করেছে।
সংস্থা প্রধান টেডরস আধানম গেব্রিয়াসিস বলেন, ‘আল আওদা ও কামাল আদওয়ান হাসপাতালে সপ্তাহান্তে সংস্থা প্রথমবারের বারের মতো পরিদর্শনে গেছে। যদিও গত অক্টোবরের প্রথম থেকেই উত্তর গাজায় ঢোকার নিয়মিত প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।’ সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, ‘আল আওদা হাসপাতালের চিত্র ভয়াবহ। এর একটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদিকে কামাল আদওয়ান হাসপাতাল সেখানকার একমাত্র শিশু হাসপাতাল। এটি রোগীতে পরিপূর্ণ।’ টেডরস আরো বলেন, ‘খাদ্য সঙ্কটে ১০ শিশু মারা গেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের অভাবে এই দুই হাসপাতালে সেবাদানে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। ইনটেনসিভ ও নবজাতক ইউনিটের মতো জটিল ইউনিটগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে।’ টেডরস নিরাপদ ও নিয়মিত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ত্রাণ বি ত উত্তর গাজায় অপুষ্টিতে কমপক্ষে ১৬ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। গত সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘ সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইল হামাস যুদ্ধের কারণে গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে হামলা চালায়। এর পরই প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় তাদের আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। সূত্র : আল-জাজিরা