সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন

রমজানে তাকওয়ার শিক্ষা

মো: লোকমান হেকিম
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪

তাকওয়া হলো আল্লাহর ভালোবাসা হারানোর ভয়। আল্লাহর অসন্তোষের ভয়। প্রকৃত মুমিন তাকওয়া দ্বারাই পরিচালিত হন। তাকওয়া মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে এবং সৎ কাজে অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যারা ইমান এনেছ, তারা তাকওয়া অর্জন করো।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৭০)। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যারা ইমান আনল এবং তাকওয়া অর্জন করল, তারা আল্লাহর বন্ধু; তাদের কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ৬২)। ক্ষুধা-পিপাসার দহনজ্বালায় নফসকে দাহ করে পরিশুদ্ধ করা রোজার মূল লক্ষ্য। এটিই কোরআনের ভাষায় তাকওয়া বা খোদাভীতি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভীতি) লাভ করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘এই কোরআন মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত : ২) মানব প্রবৃত্তির যেসব নেতিবাচক গুণ বা বৈশিষ্ট্য মানুষের জ্ঞানকে বাধাগ্রস্ত করে, তাদের বলা হয় রিপু বা শক্র। রিপু মূলত জ্ঞানের শক্র রিপুর অনিয়ন্ত্রিত ও অপব্যবহার মানুষকে পশুর অধম করে দেয়। অধঃপতনের অতলে নিমজ্জিত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি বহু জিন ও ইনসানকে (তাদের কর্মফলের দোষে) জাহান্নামের জন্য নির্ধারণ করেছি-তাদের অন্তর আছে কিন্তু অনুধাবন করে না, চোখ আছে কিন্তু দেখে না, কান আছে কিন্তু শোনে না; তারা চতুষ্পদ জন্তু বা পশুতুল্য বরং তারা তার চেয়েও নিকৃষ্ট; তারা উদাসীন।› (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত : ১৭৯)। বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে সংযম ও ত্যাগতিতিক্ষার মাস পবিত্র রমজান। পবিত্র কুরআনে সিয়াম অর্থাৎ রোজাকে অবশ্যপালনীয় একটি বিধান হিসেবে নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। পবিত্র কুরআন রমজানেই নাজিল হয়েছে, যা মানবজাতির হেদায়াতের একমাত্র অবলম্বন। এর বিকল্প নেই। যে কেউ সহজ সরল পথ পেতে চাইবে, তাকে নিবিড়ভাবে কুরআন মাজিদ অনুসরণ করতে হবে। কুরআনের কাছেই প্রতি মুহূর্তে ফিরে আসতে হবে। এ ঐশী গ্রন্থ মানবজাতির জন্য অবশ্যপাঠ্য, যা সবসময় অধ্যয়ন করতে হয়। কাউকে মানবতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হলে কুরআনকেই আঁকড়ে ধরতে হবে। এ জন্য তাকওয়া অর্জন পূর্বশর্ত। রোজার মাধ্যমেই বিশ্বাসীরা অর্জন করেন তাকওয়া বা আল্লাহ-সচেতনতা। আমাদের দেশ মুসলিমপ্রধান হলেও বাস্তবতা ভিন্ন রকম। এ দেশে রোজার মাস হওয়ার কথা সবচেয়ে শান্তিময় ও সংযত; কিন্তু রমজানেই আমাদের সংযমের পরিবর্তে ভোগের মাত্রা যায় বহুগুণ বেড়ে। এ মাসে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামষ্টিক জীবনে আসার কথা সংযম ও ত্যাগের মানসিকতা; সেখানে দেখা যায় বল্গাহীন ভোগের উদগ্র বাসনা। মাহে রমজানেই আমরা খাদ্য উৎসবে মেতে উঠি। ফলে সব পণ্যের দাম যায় কয়েক গুণ বেড়ে। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকার অজুহাতে সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম দেন বাড়িয়ে। এর একটি বড় কারণ, রোজাকে আমরা আত্মিক উন্নতির বাহন হিসেবে না নিয়ে ভোগের উৎসবে রূপান্তর করেছি। আত্মসংযমের মাসকে যে যার মতো স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার বানিয়েছি। কে না জানে, করপোরেট পুঁজির সর্বগ্রাসী এ সময়ে স্বার্থান্বেষী শ্রেণী সব কিছুকেই মুনাফার হাতিয়ারে পরিণত করার জন্য থাকে লালায়িত। অবশ্য মুনাফাখোরদের ওপর সব দায় চাপিয়ে আত্মতুষ্টি লাভ করাই যথেষ্ট নয়। প্রকৃত রোজাদার হওয়ার সাধনায় নিমগ্ন থেকে নৈতিক এ অবক্ষয় মোকাবেলা করতে হবে। এ পবিত্র মাসে আল্লাহ তায়ালার সব সৃষ্টি তাঁর অশেষ রহমতে ধন্য হয়। পরম করুণাময়ের অপার রহমতের দরজা তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে যায়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের মহাকল্যাণ লাভ থেকে বি ত থাকল, সে প্রকৃৃতপক্ষেই সব কিছু থেকে বি ত থেকে যায়। মহা বরকতপূর্ণ ও কল্যাণময় রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তই মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পূর্ণ একটি মাস রোজা পালন করেন, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে সফল। তারা আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করেন অসীম রহমত। যারা প্রকৃত সতর্ক ও জ্ঞানী, তারা এ সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করে থাকেন। রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মুমিন বান্দারা আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হন। যে রমজান মাসকে আল্লাহ এত বেশি মর্যাদাবান, রহমত, বরকত ও পুণ্যময় করেছেন; সেই অতুলনীয় মাসের প্রতি সবারই যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেখানো কর্তব্য। আমাদের অঙ্গীকার করা উচিত, আমরা সত্যিকার উপলব্ধির সাথে রোজা পালন করব। এর শিক্ষা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলিত করব। মানুষে মানুষে বৈষম্য, শোষণ ও অন্যায়ের অবসান ঘটাতে যথাসাধ্য কার্যকর ভূমিকা রাখব। সবার কল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত করব নিজেদের। সব অসঙ্গতি দূর করে রোজা সবার জীবনে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের ফল্গুধারা বয়ে আনুক; এবারের পবিত্র রমজানে এটাই হোক সবার কামনা। সেই সাথে রোজার সামগ্রিক পরিবেশকে কাক্সিক্ষত মানে রাখার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো সবার দায়িত্ব হওয়া উচিত। তাই তাকওয়া মানে পরিশুদ্ধ অন্তর, তাকওয়া মানে বিশুদ্ধ কর্ম। তাকওয়া মানে শুদ্ধাচার, নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা, মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিকতা। সঠিকভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিখাদ খাঁটি সোনায় পরিণত হতে পারে। লেখক: চিকিৎসক-কলামিস্ট




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com