বাংলাদেশ রেলওয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ২৪ মার্চ থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করবে, চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। আর ফিরতি টিকিট বিক্রি আগামী ৩ এপ্রিল শুরু হয়ে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। সকল টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে। ঈদযাত্রা কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণে আজ বুধবার রেলভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আগে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।
তিনি জানান, ঈদের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের টিকেট বিক্রি করা হবে।
রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিকিট কালোবাজারী রোধে এবার কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ টি হবে উল্লেখ করে রেলওয়ের মহাপরিচালক জানান, এবারও ঈদযাত্রার কোনো টিকিট কাউন্টারে বিক্রি করা হবে না। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেই শতভাগ টিকিট বিক্রি হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট, রেল সেবা অ্যাপ ও সহজ ডটকমের প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে।
সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। সার্ভারের ওপর চাপ কমাতে রেলের পূর্বা ল ও পশ্চিমা লের টিকিট আলাদা সময়ে বিক্রি করা হবে। ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন চলতে পারে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি জানান, পূর্বা লের টিকিট সকালে ও পশ্চিমা লের টিকিট বিকেলে বিক্রি হবে। কমলাপুর থেকে চাপ কমাতে দেশের উত্তরা লের ট্রেন রাজধানীর বনানীর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়া হবে। জয়দেবপুর স্টেশন থেকেও কিছু ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। বিশেষ ট্রেনের পাশাপাশি নিয়মিত রুটের ট্রেনগুলোতে কোচের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
আগামী ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সকল আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক অফ-ডে প্রত্যাহার করা হবে। ঈদের পরে যথারীতি সাপ্তাহিক অফ-ডে কার্যকর থাকবে। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা পূরণের জন্য পাহাড়তলী ওয়ার্কসপ থেকে ৫০টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কসপ থেকে ৩৬টি বিজি কোচসহ সর্বমোট ৮৬টি কোচ যাত্রীবাহী সার্ভিসে অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ২৪৮ টি (পূর্বা লে ১৩২ টি ও পশ্চিমা লে ১১৬ টি) লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ট্রেনে ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানায়।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর জানান, নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনা নিশ্চিত করে যাত্রী সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময়ানুবর্তিতা রক্ষার জন্য ডিভিশনাল ও জোনাল কন্ট্রোলে পৃথক পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করে কর্মকর্তাদের ইমার্জেন্সি ডিউটি প্রদান করা হবে। সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও জংশন স্টেশন এবং সিগন্যাল কেবিনে কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের তদারকির মাধ্যমে ট্রেন অপারেশন পরিচালনা করা হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ট্রেন সিডিউল অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে রেলপথ পেট্রোলিং এর ব্যবস্থা করা হবে। রেল ব্রীজসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিগনালিং ব্যবস্থা, কোচ এবং ইঞ্জিনের নিবিড় পরিচর্যা ও পরীক্ষা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্ঘটনাস্থলে প্রেরণের লক্ষ্যে রিলিফ ট্রেনসমূহ সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে।
মহাপরিচালক জানান, ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর নীলসাগর ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের পরিবর্তে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে চলাচল করবে। উক্ত দুটি ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে না। ঈদ-উল-ফিতরের দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কতিপয় মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। তবে কোন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।
আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস, মিতালী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন ৭ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন জলপাইগুড়ি থেকে ১৭ এপ্রিল চলাচল করবে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের পূর্বে ৮ এপ্রিল রাত থেকে ঈদের পরের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কনটেইনার ও জ্বালানী তেলবাহী ট্রেন ব্যতিত অন্যান্য সকল গুডস ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।