গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতেই পড়ে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তার কপালে গভীর ক্ষত ছিল। নাকেও রক্ত ছিল। এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকদের একটি বোর্ড তৈরি করা হয়। সিটি স্ক্যানের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। এরপর তার কপালে তিনটি এবং নাকে একটি সেলাই করা হয়।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে কোনো সমস্যা নেই। তবে তাকে অবজারভেশনের জন্য হাসপাতালে থাকতে বলা হয়। চিকিৎসকদের বয়ান অনুযায়ী মমতা তাতে রাজি হননি। রাতেই তিনি বাড়ি ফিরে যান। মুখ্যমন্ত্রী আহত হওয়ার পরেই তৃণমূলের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে মমতার রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করা হয়। একই সাথে জানানো হয়, নিজের বাড়িতে হাঁটার সময় তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন। বস্তুত, ওই সময়েই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গেছিলেন তার ভাইয়ের ছেলে এবং তৃণমূল নেতা অভিষেক ব্যানার্জি। তিনিই তাকে গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে পৌঁছে যান কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমসহ একাধিক তৃণমূলের নেতা।
মুখ্যমন্ত্রীর আরোগ্য কামনা করে টুইট করেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক খবর নেয়ার জন্য ফোন করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল এবং বর্তমানে দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পৌঁছান পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল। বস্তুত, এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তৈরি হওয়া চিকিৎসকেরা একটি সংবাদ সম্মেলন করেন হাসপাতাল চত্বর থেকে। সেখানে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রীকে পিছন থেকে ঠেলা হয়েছে। বস্তুত, এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তৃমমূলের এক নেতা ডয়চে ভেলেকে জানান, ঘরের বাইরে নয়, বাড়ির ভিতরেই মুখ্যমন্ত্রী পড়ে যান। একটি ‘শেলফে’ তার মাথা ঠুকে যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসকদের একজন ডয়চে ভেলেকে জানান, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন যে তাকে পিছন থেকে ঠেলা হয়েছিল। সাংবাদিক ওই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, একজন চিকিৎসকের পক্ষে কি বোঝা সম্ভব, রোগীকে পিছন থেকে ঠেলা হয়েছিল কি না? সাধারণত, পুলিশ এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা এই তথ্য দিতে পারেন। চিকিৎসক এবিষয়ে কোনো উত্তর দেননি। পুলিশের পক্ষ থেকেও ডয়চে ভেলেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রশ্ন হলো, মুখ্যমন্ত্রী এই অভিযোগ কেন করলেন? সে সময় তার ঘরে আর কে কে ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তৃণমূল এবং পুলিশের তরফে এবিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। ২০২১ সালে নির্বাচনের আগেও নন্দীগ্রামে গিয়ে আহত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর পায়ে প্লাস্টার নিয়ে ভোটের প্রচার করেছিলেন তিনি। এদিনও হাসপাতাল থেকে যখন গাড়িতে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার কপালে ব্যান্ডেজ দেখা গেছে। তবে কে তাকে পিছন থেকে ঠেললেন, সেই প্রশ্নের এখনো কোনো সদুত্তর মেলেনি। সূত্র : ডয়চে ভেলে