কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কামাত আঙ্গারীয়া ছড়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা ভূমিহীন বিধবা ছালেহা বেগমের ভাগ্যে জোটেনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। ভূমিহীন বিধবা ছালেহা বেগম তার মৃত্যুর আগে নিজের নামে একটুকরো জমি ও একটি ঘর দেখে যেতে চান। সরেজমিনে দেখা গেছে, ছালেহা বেগম একজন বিধবা নারী। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স প্রায় ৬৮ বছর। তার স্বামী শমসের হোসেন প্রায় ৩ যুগ আগে মারা গেছেন। নিজের জমিজমা না থাকায় ছালেহা বেগম ছেলেমেয়েদের নিয়ে যুগের পর যুগ অন্যের জমিতে ঝুপড়ি তুলে বসবাস করছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা জুড়ে ভূমিহীনদের জমি ও ঘর করে দেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে ভূমিহীন বিধবা ছালেহা বেগমের ভাগ্যে ঘর জোটেনি। কেউ তার জন্য একটুকরো জমির ব্যবস্থা করে দেয়নি। ছালেহা বেগমের দুই ছেলে দিনমজুর। তারা বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। অসচ্ছলতার কারণে তারা তাদের মায়ের তেমন খোঁজ রাখে না। ছালেহা বেগমের এক মেয়ে শারিরীক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ওই মেয়েটি স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে এক সন্তান নিয়ে ছালেহা বেগমের সংসার ফিরে এসেছে। ছালেহা বেগম তার জীবনের অধিকাংশ সময় অন্যের জমির কোনা কাঞ্চিতে ঝুপড়ি তুলে কাটিয়ে দিলেও সে বিষয়ে তার কোনো চিন্তা নেই। তার যত দুঃশ্চিন্তা প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে নিয়ে। তিনি মারা গেলে প্রতিবন্ধী মেয়েটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? মৃত্যুর আগে তিনি প্রতিবন্ধী মেয়েটির মাথা গোঁজার জন্য নিজের একখ- জমি ও সেখানে একটি ঘর দেখে যেতে চান। ছালেহা বেগম বলেন, ‘আগোত জমির তেমন দাম আছিলো না, মাইনষের ম্যালা জমি আছিলো। ভিটা জমিত আবদ হয় নাই দ্যাখি এমনে ফ্যালে থুইছিলো। সেই জমিত দয়া করি আমাক ঘর তুলি থাইকপ্যার দিছে। এ্যালা জমির দাম হইছে। মাইনষে আর কতদিন আমাক তার জমিত থাইকপ্যার দিবে? মোর জীবনটা মাইনষের জমিত থাকিয়ায় কাটি গেলো, মুই আর কয়দিনে বা বাচিম! প্রতিবন্ধী বেটিটাক নিয়ায় মোর যত চিন্তা। মুই মরি গেইলে বেটিটা কোটে থাইকপে? কাঁই উঁয়াক ঘর তোলার জাগা দিবে? শুনচোং যার জমি নাই সরকার থাকি তাক নাকি ঘর দেয়। মোক একটা ঘর দিলে সউগ চিন্তা দুর হইলো হয়। শান্তিতে মইরব্যার পানু হয়।’ ছালেহা বেগমের প্রতিবেশী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলেফ উদ্দিন বলেন, ‘বিধবা ছালেহা বেগমের জায়গা জমি নাই। অন্যের জমিতে ঘর তুলে কোনোমতে দিন পার করছে। তার একটা প্রতিবন্ধী মেয়ে রয়েছে।’ কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘ভূমিহীন ব্যক্তিকে ঘর দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’