স্ত্রীর মর্যাদা পেতে গর্ভে ৫ মাসের সন্তান নিয়ে নড়াইলের কালিয়ার উত্তর ডুমুরিয়া গ্রামে স্বামী সাফায়াত মোল্যার বাড়িতে এসে উপজেলার বাঐসোনা ইউনিয়নের সদস্য রাসেল শেখের মারধরে আহত শান্তা আক্তারের(৩৪) গর্ভের সন্তানের অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় গত শনিবার বিকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গর্ভের সন্তানের জীবন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। তার উপর আবার ইউপি মেম্বর রাসেল ও স্বামীসহ অন্যদের নামে উপজেলার নড়াগাতি থানায় অভিযোগ দাখিল করায় অজ্ঞাত পরিচয় লোকজন মোবাইলে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। তিনি এখন নিজের জীবনের নিরাপত্তাসহ সন্তানের জীবনের ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছেন। গত ৩ দিনেও পুলিশ তার অভিযোগের কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে হাসপাতালের বিছানা থেকে শান্তা অভিযোগ করেছেন। পুলিশ বলেছে অভিযোগটি তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। শান্তার ভাষ্য ও অভিযোগের বিবরনে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার পিয়ারী মোহন রোডের মৃত কুদ্দুস আলীর মেয়ে। বাবা মারা যাওয়ার পর একমাত্র মা বকুল বেগমই(৭০) তার অবলম্বন। ডায়বেটিকসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারনে তিনি ঠিকমত চোখেও দেখতে পান না। মন দেয়া নেয়ার সুবাদে প্রায় ৯ বছর আগে তার বিয়ে হয় কালিয়া উপজেলার উত্তর ডুমুরিয়া গ্রামের জালাল মোল্যার ছেলে সাফায়েতের সাথে। বিয়ের পর স্বামী তাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতে থাকে। তাদের ঘরে রয়েছে ৬ বছর বয়সী সন্তান সোহেল তারভীর। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর রুটি কেনার নাম করে ছেলেকে নিয়ে ঢাকার বাসা থেকে পালিয়ে উত্তর ডুমুরিয়া গ্রামে চলে আসে। স্বামী ও সন্তানের খোজখবর না পেয়ে গত ৪ মার্চ প্রথম বার স্বামীর বাড়িতে আসলে রাসেলসহ অন্যরা তাকে একই কায়দায় তাড়িয়ে দেয়।সেই দিন শান্তা নির্যাকনকারিদের বিরুদ্ধে নড়াগাতি থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মিমাংশার নামে সেটিকে ধামাচাপা দিয়ে দেয়। এরপর তিনি গত ১৫ মার্চ সকাল ১০ টার দিকে স্বামীর বাড়িতে আসলে স্বামী ও তার স্বজনদের সহয়োগিতায় স্থানীয় ইউপি সদস্য রাসেল শেখ তার বুক ও পেটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিট করে তাকে ও তার গর্ভের সন্তানকে আহত করে তাড়িয়ে দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। শান্তা আরও অভিযোগ করে বলেছেন, তাকেসহ তার গর্ভের সন্তানের উপর হামলার ঘটনায় তিনি ওই দিন সন্ধ্যায় নড়াগাতি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। শনিবার বিকালে তাকে কালিয়া থেকে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠনোর পর থেকে অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিরা মোবাইল ফোনে তার অবস্থান জানতে চেয়ে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। গর্ভের সন্তান নিয়ে তিনি যেমন দুশ্চিতায় আছেন, তেমন নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে চিকিৎসা শেষে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন। উপজেলার নড়াগাতি থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. বোরহান উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অভিযোগটির তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিক পাভেজের জিডির তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিক আমানত ইসলাম পারভেজ অভিযোগ করে বলেছেন, এই গৃহবধুর উপর হামলার ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ ও অসহায় নারীকে চিকিৎসা সহযোগিতা দেয়ার অপরাধে ইউপি সদস্য রাসেল কর্তৃক হেনস্তা ও হত্যা হুমকির বিষয়ে জিডি করার কারনে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে রাসেল ও তার সহযোগিরা। বিষয়টি তিনি থানা পুলিশকে জানিয়েছেন। বাঐসোনা ইউপির চেয়ারম্যান মো. চুন্নু শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, এর আগেও সাফায়েত ও রাসেলরা ওই গৃহবধুকে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করেছে। ঘটনাটি তিনি নিজে মিমাংশার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছেন। থানা পুলিশের সাথে তিনি কথা বলেছেন। তবে ঘটনাটিতে পুলিশের ভুমিকার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। কালিয়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. পার্থ বলেছেন, এই গৃহবধুর পেটে আঘাতের কারনে সামান্য রক্তক্ষরন হয়েছে। গর্ভের সন্তান নড়াচড়া না করায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার বিকালে তাকে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।