ফ্যাশনে জামদানি শাড়ির জনপ্রিয়তা এখনো বিন্দুমাত্র কমেনি বরং আরও বেড়েছে। যুগ যুগ ধরে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান থেকে শুরু কয়ে ঘরোয়া আয়োজনেও অনেকেই জামদানি পরেন। শুধু শাড়িই বা কেন জামদানির সালোয়ার কামিজ, কুর্তি থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়া এমনকি ছোটদের পোশাকও এখন পাওয়া যায়। তবে বাজারে এখন নকল সব জামদানির মাঝে যেন আসলটি হারাতেই বসেছে। যেহেতু আর দুদিন পরেই পহেলা বৈশাখ আবার আসছে ঈদুল ফিতর, এ সময় কমবেশি সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত আছেন। যদি কেউ জামদানি শাড়ি বা পোশাক কিনতে চান তাহলে তার আগে অবশ্যই তা আসল কি না যাচাই করে নেবেন।
যদিও ডিজাইন আর রং দেখে আসল-নকল শাড়ি বিচার করা কিন্তু বেশ কঠিন। বাজারে এখন সফট জামদানি, ঢাকাই জামদানি, বাংলা জামদানিসহ হরেক রকম জামদানিতে ভরে গেছে। এসবের দামেও হেরফের আছে। আসল ভেবে আবার অনেকেই নকলটি বেশি দাম দিয়ে কিনছে।
জামদানি শাড়িতে জলপাড়, জবাফুল, করোলা, তেরছা, দুবলা, বলিহার, পান্না হাজার, পানসি, বটপাতা, কটিহার ইত্যাদি নকশা থাতে। যে জামদানিতে ছোট ফুল বা লতাপাতার ডিজাইন তেরছাভাবে থাকে তাকে তেরছা জামদানি বলা হয়। ছোট ছোট ফুল, লতাপাতার পুটি এগুলো যদি শাড়ির জমিনে থাকে তাহলে তাকে বলে জালার নকশা।
আসল জামদানি শাড়ি হয় হাতে বোনা। তাই এর ডিজাইন হয় খুব সূক্ষ্ম ও নিখুঁত। ডিজাইনগুলো খুব মসৃণ হয়। তাঁতিরা একটি সুতোর সাহায্যেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বুনন করেন জামদানি। এই শাড়ির সুতার কোনো অংশ বেরিয়ে থাকে না। জামদানি শাড়ির সামনের দিক ও পিছনের দিকের বুনোট কিন্তু একই রকমের হয়। আসল জামদানি শাড়িতে সুতি ও সিল্ক সুতো ব্যবহার করা হয়। সুতার কাউন্ট দিয়ে সুতোর মান বোঝা যায়।
সুতা যত বেশি চিকন হবে ততই কিন্তু কাজ সূক্ষ্ম হবে। তবে শাড়ি কতটা সূক্ষ্ম ও সুন্দর হবে তা কিন্তু নির্ভর করে তাঁতির দক্ষতার উপর। সুতো বেশি চিকন হলে তা যেমন বুনতে বেশি সময় লাগে তেমনই কিন্তু দাম বেশি হয়।
একটি জামদানি তৈরি করতে একজন তাঁতিকে গড়ে ১২-১৪ ঘণ্টা কিন্তু কাজ করতে হয়। শাড়ির ডিজাইনের উপরই কিন্তু সব নির্ভর করে। তাই একটা জামদানি শাড়ি বুনতে সময় লাগে ১ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত। আর মেশিনে বোনা শাড়ি সপ্তাহে ৮-১০টি তৈরি করা হয়। তাই এর দামও কিন্তু অনেক কম হয়।
আসল জামদানি শাড়ির শুরুতে সাড়ে পাঁচ হাত পর্যন্ত কোনো পাড় থাকে না। অর্থাৎ শাড়ির যেটুকু অংশ কোমরে গোঁজা থাকে সেখানে কোনো পাড় নেই। তবে মেশিনে বোনা শাড়িতে পুরোটাই পাড় থাকে। হাতে বোনা জামদানির ওজন যেমন হালকা হয় তেমনই পরেও আরামদায়ক। অন্যদিকে মেশিনে বোনা জামদানি খসখসে হয়। নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি হয় বলে একটু ভারিও লাগে। আসল জামদানি শাড়ি তৈরির সময়, সুতার মান ও কাজের ধরন অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ৩০০০-১,২০০০০ টাকা বা তার বেশি পর্যন্তও একটি জামদানি শাড়ির দাম হতে পারে। তাই দাম দিয়ে জামদানি কেনার আগে আসল না কি নকল তা দেখে শুনে ও বুঝে কিনুন।