শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

বস্তায় মিলগেটের দাম লেখায় আপত্তি, লিখিত খুচরামূল্য চান ক্রেতারা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

চালের বাজারমূল্য সহনশীল ও ইচ্ছামতো ধানের জাত লিখে বিক্রিতে নিয়ন্ত্রণ আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন আইনে, মিল মালিকদের গুদাম থেকে চাল বের করার আগে বস্তার ওপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা-উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, ধান বা চালের জাত এবং মিলগেটের দাম উল্লেখ করতে হবে। এসব তথ্য চালের বস্তার ওপর থাকবে মুদ্রিত অবস্থায়। বিষয়টি নিয়ে মোটেও খুশি নন মিল মালিকরা। এটি বাস্তবায়ন করা রীতিমতো অসম্ভব বলছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে, ভোক্তারও তেমন কোনো সুবিধা থাকছে না এতে। এসব চাল ভোক্তা পর্যায়ে কত দামে (সর্বোচ্চ খুচরামূল্য) বিক্রি হবে সেটি লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান চাইলে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য উল্লেখ করতে পারবে, না করলেও সমস্যা নেই। এতে খুশি নন সাধারণ ভোক্তারা।
তারা বলছেন, মিলগেটের দামের চেয়ে জরুরি সর্বোচ্চ খুচরামূল্য উল্লেখ থাকা, যে দামে চাল বিক্রি হবে। যেহেতু মিলগেটের দামে খুচরা দোকানে চাল কেনা যাবে না, সে কারণে ওই দাম ভোক্তার জন্য খুব বেশি কাজে আসবে না। ভোক্তারা বস্তার গায়ে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য বাধ্যতামূলক চান।
মিল মালিকরাও মিলগেটের দাম উল্লেখ করার বিষয়ে আপত্তি জানান। তাদের বক্তব্য, ধানের দাম সব সময় কমবেশি হয়। ফলে একটি নির্ধারিত দামে মিল থেকে চাল সরবরাহ করা কঠিন। আবার প্রতিনিয়ত বস্তার দাম পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়। মিল থেকে চাল বের করার পরে স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণনের ক্ষেত্রেও অনেক খরচ বাড়ে। যে কারণে মিলের দামের সঙ্গে বাজারের দামের বড় পার্থক্য থেকে যায়। বস্তায় মিলগেটের দাম উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা প্রায় অসম্ভব।
এ বিষয়ে এসিআই ফুড অ্যান্ড কমোডিটি ব্র্যান্ডসের বিজনেস ডিরেক্টর ফারিয়া ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বস্তার ওপর মিলগেটের দাম উল্লেখ করার বিষয়টি আরও বিবেচনা করা উচিত। কারণ ধানের দাম নির্ধারিত নয়, ওঠা-নামা করে। সেভাবে চালের দামও দ্রুত পরিবর্তন হয়। এটা নিয়ে (মিলগেটের দাম লেখা) আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবো, বুঝতে পারছি না। আমরা অসুবিধায় পড়ে গেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের চালের বস্তা/প্যাকেটে কিন্তু সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দেওয়া থাকে। এখন মিলগেটের দাম দেওয়া হলে সেটার কোনো সুফল ভোক্তারা পাবেন না। কারণ বাজারদরের সঙ্গে সে দাম মিলবে না। ক্রেতা-বিক্রেতার একটি ঝামেলা তৈরি হবে। এছাড়া পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেবে। এসব বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।’
এদিকে খিলগাঁও বাজারে একজন ক্রেতা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘চিন্তা-ভাবনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দাম নিয়ন্ত্রণে এ পদক্ষেপ হলেও এতে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ক্রেতারা সুফল পাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘ধরুন এক বস্তা চালের মিলগেটের দাম ১৫শ টাকা লেখা। তাহলে এটা আমি কত দামে কিনবো? বিক্রেতারা তো মিলগেটের দামে চাল বিক্রি করবেন না। তাহলে লাভ কী? উচিত ছিল সর্বোচ্চ খুচরামূল্য বাধ্যতামূলক থাকবে, যে দামে আমি কিনতে পারবো।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘উচিত ছিল চালের দাম মিলগেটে কত হবে, পাইকারি ও খুচরায় কত বিক্রি হবে, সবকিছু উল্লেখ থাকা। তাহলে সবই পরিষ্কার হতো। আসলে আমাদের যেসব সিদ্ধান্ত হয়, সেগুলো ব্যবসায়ীদের সুবিধা আগে বিবেচনা করে হয়। ভোক্তাদের স্বার্থ সব সময় উপেক্ষিত থাকে।’
এমন সব অসঙ্গতির কারণে সরকারের ওই পরিপত্র পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। দেশের কোনো চালকল মালিক এখনো মিলগেটের দাম উল্লেখ করে বাজারে চাল সরবরাহ করেননি। গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকার বেশকিছু বাজার ঘুরে এক বস্তাও নতুন চাল মেলেনি।
এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কাওসার আলম খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজারে সকালে এক দাম, বিকেলে এক দাম। ফিক্সড প্রাইস করবো কীভাবে। নিজে বস্তার ফ্যাক্টরি করতে হবে। সকাল-বিকেল রেট চেঞ্জ করে দাম দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পাইকারিতেও কিন্তু কোনো ফিক্সড রেট হয় না। এটা কীভাবে করবে সেটা আমরাই বুঝতে পারছি না। খুচরায় একটা রেট হতে পারে। প্রয়োজনে সেটা করা হোক। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব ঝামেলায় আছি। এটা বাংলাদেশে কীভাবে কার্যকর করবে আমি বুঝি না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ধরুন মিলগেট রেট কার্যকর হলো, তখন চালের বস্তায় বেশি দাম লেখার প্রবণতা তৈরি হবে। কারণ বেশি রেটের চাল খুচরা বিক্রেতারা কিনে বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারবে, তারা সেটা চাইবে। আবার বেশি রেটের চাল কম দামে কিনে মজুত করা হবে। তখন বস্তার ওপর একটি লোক দেখানো দাম ঠিকই থাকবে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভিন্ন দামে কেনাবেচা হবে। এতে ক্রেতাদের আরও ভোগান্তি হবে।
মালিবাগে শাওন রাইস এজেন্সির মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘এখনো নতুন এক বস্তা চালও আসেনি। এটা কার্যকর করা সম্ভব হবে না। বাজারে যেমন এর আগে পাটের বস্তা বাধ্যতামূলক হয়েও এখনো সেটা হয়নি এমনই হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে এখনো অনেক পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া আছে, সেগুলো কেউ মানছে? শুধু শুধু এ নতুন আইন মোবাইল কোর্টে ব্যবহার হবে। মাঝে মধ্যে পাইকারি দোকানিরা জরিমানা দেবেন, এই।’
এসব বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেশের ৬৪ জেলায় মিল মালিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসকরা মিটিং করেছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা মিটিং করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিবও মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে গেলে বা হঠাৎ বাড়লে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। চালের বাজারমূল্য সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে এ পদক্ষেপ।
মিলাররা এ আইন কার্যকরে আরও অন্তত এক মাস সময় চাইছেন। সেজন্য তারা মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছেন বলে জানা যায়। খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘চালকল মালিকরা আবারও সময় চেয়ে আবেদন করেন। আমরা বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখছি।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com