পরিবেশ আইন অমান্য করে কয়েক মাস ধরে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এতে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। সন্ধ্যা হতেই চলাচল শুরু করে মাটি ভর্তি লড়ি ও ড্রাম ট্রাক। চলে রাতভর। মাটিবাহী ট্রাকের প্রভাব পড়ছে সড়ক গুলোতেও। স্থানীয়ভাবে মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়ে চলেছে। জানা গেছে, উপজেলার মোক্তারপুর, বক্তারপুর, জাঙ্গালিয়া, জামালপুর, বাহাদুরসাদী, নাগরী ও তুমলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি গুলো থেকে রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে মাটি। আগে বিচ্ছিন্ন ভাবে এই ধরনের মাটি কাটা হলেও সম্প্রতি তা বেড়েছে কয়েক গুণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মালিবন্দের কয়েকটি স্থানে একাধিক ভেকু সন্ধ্যা থেকে সারারাত কাটা হয় কৃষি জমির মাটি।
তবে এ কাজের জন্য এলাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে তাদের নিয়োগ করা লোক পাহারা দেয়। কোন ভাবে প্রশাসনের লোকজন অভিযান করলেই তাদেরকে তারা খবর দিয়ে দেয়। আর খবর পেয়ে তারা সব কিছু রেখে তারা পালিয়ে যায়। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের ৬ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলি জমির মাটি কাটা তাই বেআইনি। উপজেলার জামালপুর সরেজমিনে দেখা যায়, শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে ফসলি জমি থেকে প্রতিদিনই মাটি লুট করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে কোথাও ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এসব গর্তে পাশের কৃষি জমির মাটিও ভেঙে পড়ছে। কোনো কোনো জমির মালিক টাকার লোভে মাটি বিক্রি করলেও অধিকাংশ কৃষক বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করছেন। মাটি ব্যবসায়ীদের লুট থেকে বাদ যাচ্ছে না খাস জমি, খাল ও নদ-নদীর তীর। এসব মাটির শেষ ঠিকানা হচ্ছে ইটভাটা। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় এরই মধ্যে শতাধিক একর কৃষি জমি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। জমি গুলোতে ধান আর শস্য চাষ করা হতো। গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় ওই সব জমিতে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা বলেন, পূর্ব জামালপুর ও বালুয়াভিটা এলাকায় কয়েক বিঘা জমির ওপর ধান চাষ ও বিভিন্ন সবজি লাগিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। রাতের আঁধারে মাটি কাটার কয়েকটি চক্র কৃষি জমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পাশের কৃষি জমির মাটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাটি কাটা বন্ধ না করলে একসময় ওই এলাকা থেকে কৃষিজমি হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস. এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, আমি মাত্র কয়েক দিন হয় এ উপজেলায় যোগদান করেছি। কিন্তু যখনই এ ধরণের খবর পেয়েছি তখনই অভিযান পরিচালনা করছি। তিনি আরো বলেন, আমি গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার জামালপুর, জাঙ্গালিয়া, বক্তারপুর, মোক্তারপুর ইউনিয়নে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করি। এ সময় কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলন ও বিপনন বন্ধ করি। অভিযানে ৫টি ভেকু ও ৫টি লড়ির ব্যাটারি জব্দ করা হয়েছে।