নীলফামারী জলঢাকায় এ কে ব্রিকস- ২ ইট ভাটার কালো ধোয়ায় কৃষকদের প্রায় শতাধিক একর জমির ধান নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্বপ্নের সোনালী ধান হারিয়ে দিশেহারা কৃষক। ইট ভাটা কর্তৃপক্ষের অসাবধানতার কারনে এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের পূর্ব খুটামারা এলাকায়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করছে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা। অনুলিপি হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিস সহ বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় গত ৭ মে (বুধবার) দুপুরে ইট ভাটার প্রবেশ ফলকের সামনে মানববন্ধন করেছে শতশত নারী ও পুরুষ। মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন যথাসময়ে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং ইটভাটা বন্ধ করে দিতে হবে। অন্যথায় আমরা সড়ক অবরোধ করবো,প্রয়োজনে ভাটার একটি ইটও বের হতে দিবো না। সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব খুটামারা এলাকায় অবস্থিত এ. কে. ব্রিকস-২ গত ৭ বছর আগে স্থানীয় কিছু কৃষকদের লোভ দেখিয়ে কিছু জমি ১০ বছরের জন্য কন্টাক্ট নিয়ে একটি ইট ভাটা স্থাপন করেন। এরপর প্রতিবছর পর্যায়ক্রমে আশেপাশের জমির মালিকদের চাপে ফেলে সুকৌশলে আরও জমি কন্টাক্ট নেয়। বর্তমানে তারা আবাদি ৩০ বিঘা জমি কন্টাক্ট নিয়েছে। আর এতে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই ভাটা স্থাপনের পর থেকে প্রতি বছরে ভাটার কালো ধোয়ায় একটা না একটা ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বছর ইট ভাটার কালো ধোয়ায় নষ্ট হয়েছে ধান ,ভূট্টা ,আম,লিচু গাছ সহ বিভিন্ন ফসলী ক্ষেত। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে রোববার দিবাগত রাতে ইটভাটার কালো ধোয়ার গ্যাস ছেড়ে দিলে পরের দিন সোমবার সূর্য উঠার সাথে সাথে ধান গাছগুলো ঝলসে যেতে শুরু করে।কয়েক দিনে ইট ভাটার উত্তর পশ্চিম দিকের প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে আনুমানিক শতাধিক একর জমির আবাদি ধানের গাছগুলো ঝলসে যায়। ধান গাছগুলো লালচে আকার ধারন করে। এতে ধানের দানাগুলো চিটা ধানে পরিনত হয়। ইট ভাটার কালো ধোয়া এরকম প্রতি বছর কৃষকদের স্বপ্ন কেড়ে নেয়,দাবি স্থানীয়দের।স্বপ্নের সোনালী ধান হারিয়ে হতাশা ও চোখের জলে দিন পার করছে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা। তবে কৃষক সমাজ থেকে দাবি উঠেছে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও অবিলম্বে ইট ভাটা বন্ধ করে দিতে হবে। নয়তো প্রতি বছর এভাবে কৃষকেরা তাদের আশা ভরসা হারাতে পারে। এ কে ব্রিকস-২ এর ইট ভাটার কালো ধোয়ায় ধান ক্ষেত নষ্ট ও ভাটার বৈধ কোন কাগজ নাই স্বীকার করেন এ কে আনোয়ার ব্রিকস-২ এর ম্যানেজার তাজুল ইসলাম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ বলেন, আমরা ঘটনাটি শোনার পর তাৎক্ষণিক সরেজমিনে গিয়েছি। ধারনা করা হচ্ছে ভাটার কালো ধোয়ায় এমনটি হতে পারে। তবে আমরা কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো এবং ধান ক্ষেত পুনরুদ্ধার করার চেষ্টায় থাকবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি আর সারোয়ার বলেন,অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নীলফামারী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মন এর সাথে মুঠোফোনে কথা তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের একটি অভিযোগ পেয়েছি। যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে ইনফোর্সমেন্টের জন্য আমরা আমাদের হেড অফিসে সুপারিশ করব। এ কে ব্রিকস ২ এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ কে ব্রিকস ২ আমাদের কাছ থেকে কোন ছাড়পত্র নেয়নি। আমরা ঘটনা স্থল দ্রুত পরিদর্শন করব। পরিদর্শন শেষে অভিযুক্ত এ কে ব্রিকস ২ এর মালিকের বিরুদ্ধে ইটভাটা আইনে যে আইন আছে সে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।