রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

প্রচন্ড গরমে বরিশালের তৈরী হাত পাখা দেশব্যাপি মানুষের শরীর শীতল করছে, ভাল নেই পাখা কারিগররা

শামীম আহমেদ বরিশাল
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

রমজান মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত প্রচন্ড গরমে বরিশাল সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষের মধ্যে এক রকম নাভিশ^াষ উঠেছে। আবার গত দুইদিন ধরে রৌদ্র ও গরমের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করায় খেটে খাওয়া দিন-মজুর শ্রমিকরা ঘাম জড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। একই সময়ে বরিশাল নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ এর ভেলকিবাজী, ভ্যপসা গরম ও প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী চিরচেনা তালপাখা। তাই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বরিশালের পাখা পল্লীর মহিলা-পুরুষ কারিগরা। বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী গ্রামের পাখা পল্লীর কারিগররা বলেন, এ ‘পাখা পল্লীর’ তালপাখা বেশি বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন মেলা, হাট-বাজার, বাসষ্ঠ্যান্ডসহ বিভিন্ন দোকানে।
গরম এলেই প্রচন্ড তাপদাহ থেকে একটু স্বত্তি পেতে সকলের হাতেই চোখে পড়ে যায় তালপাতার হাত পাখা। আর এসব পাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এখানকার শতাধিক পরিবার। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে ওইসব পরিবারের সদস্যরা তালপাতা দিয়ে হাত পাখা তৈরি করে জীবন জিবিকা ও সংসারের ভরন-পোষন চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। পাখা পল্লীর কারিগররা আরো বলেন, পাখা তৈরীর উপকরণের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অর্থাভাবে এখানকার অনেকেই বর্তমান সময়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। যারা এখনো এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার সহায়তা কামনা করছেন। সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে হস্ত শিল্পটিতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সবস্তরের এখন দাবি উঠেছে। গৌরনদী উপজেলার গ্রামটির নাম চাঁদশী হলেও পাখা তৈরির জন্য এলাকাটিকে ‘পাখা পল্লী’ নামেই সকলের কাছে অতি সুপরিচিত। এ ব্যাপারে আলাপকালে পাখা পল্লীর কারিগর হাসেম খলিফা(৬০), তরু হালদার(৪০) বলেন, বিগত ৩০ বছর ধরে তারা পাখা বানানোর কাজ করছেন। তাদের পরিবারের সকল সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করে এ পেশায় বর্তমান সময়ে কোন রকম টিকে আছেন। বর্তমানে পাখা তৈরির প্রধান উপকরণ ‘তাল পাতার’ তীব্র সংকট চলছে। গৌরনদী উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে অধিক মূল্যে তাদের তালপাতা ও বাঁশ ক্রয় করতে হয়। বছরের ছয় মাস তারা এ কাজ করে থাকেন। হাসেমের পরিবারের ৭ জন ও তরুন হালদারের পরিবারে ৬ জন সদস্য এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। হাসেমের কন্যা সিমু আক্তার কলেজে পড়া-শুনা করছেন। কলেজ থেকে ফিরেই বাবার সাথে এ পাখা বানানোর কাজ করেন তারা। রোগাক্রান্ত হাসেমের সাত সদস্যর সংসার চলছে হাত পাখা বানিয়েই। তার পরিবারের সকলে মিলে একদিন ১’শ টি হাতপাখা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি পাখা তৈরি করতে আগে তাদের খরচ হত ১২ টাকা আর পাইকারি হিসেবে বিক্রি করছেন ১৫ টাকায়। এখন বর্তমানে পাখা তৈরীতে খরচ হয় ১৫ টাকারও বেশি তাই একটু বেশি দরেই পাইকারদের কাছে দাম চাইতে হচ্ছে। এদিকে পাশ^বর্তী উপজেলা আগৈলঝাড়া উপজেলার কারিগর কাসেম খলিফা, আবুল হোসেন, শাহজাহান খলিফা, স্বপন খলিফাসহ একাধিক করিগর জানান, সপ্তাহে একদিন পাইকার আসে বাড়ি থেকে হাত পাখা ক্রয় করে নিয়ে যায়।
পাখা তৈরি করাই হচ্ছে তাদের গ্রামের প্রধান আয়ের উৎস। তাদের হাত পাখা পল্লীর তৈরি পাখা বিক্রি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন মেলা, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তারা আরো জানান, উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির পর অর্থাভাবে এ পেশার সাথে জড়িত আরো প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার পেশা পরিবর্তন করেছেন। বাকি পরিবারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে সহজ শর্তে সরকারী ভাবে সুদ মুক্ত ঋণ দেয়ার জন্য তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com