রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ অপরাহ্ন

প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার ভিডিও করায় সাংবাদিকদের উপর হামলা

জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার ভিডিওধারণ করতে যাওয়ায় মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকদের হামলায় অন্তত ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (২১মে) বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেদ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ৭ জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তারা হলেন, বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়, যায়যায়দিনের জাজিরা প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন, দৈনিক সংবাদের জাজিরা প্রতিনিধি পলাশ খান, দৈনিকজবাবদিহির জাজিরা প্রতিনিধি সানজিদ মাহমুদ সুজন, ঢাকা ক্যানভাসের প্রতিনিধি বরকত মোল্লা,বাংলাদেশ সমাচারের রুহুল আমিন, কালবেলার জাজিরা প্রতিনিধি আব্দুর রহিম। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় জাজিরা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সংবাদের জাজিরা প্রতিনিধি পলাশ খান, জাজিরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুজন মাহমুদ, বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয় ও ঢাকা ক্যানভাসের প্রতিনিধি বরকত মোল্লাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৮ টা থেকে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইদ্রিস ফরাজী। বেলা ১১ টার দিকে সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেদ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা প্রকাশ্যে ভোট দিতে ভোটারদের চাপ প্রয়োগ করে ভোট নিচ্ছিলেন। এমন অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন এবং ভিডিও ধারণা করেন যায় বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এসময় মোটরসাইকেল প্রতীকের ব্যাচ পরিহিত এক ব্যক্তি তাদের প্রথমে বাঁধা দেয় পরে তাদের কাছ থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে সাথে থাকা অন্য সাংবাদিকরা তাদের ছাড়াতে গেলে কমপক্ষে ৫০ জন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক তাদের উপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। পরে আহতদের মধ্যে ৩ জনকে গুরুতর অবস্থায় জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হামলায় আহত সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, আমরা ভোট কেন্দ্রের বাহিরে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ জানতে পারি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা। পরে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করতে গেলে সবুজ শার্ট ও মোটরসাইকেলের ব্যাচ পরা এক যুবক আমাদের বাঁধা দেয় এবং মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে আমার সাথে থাকা অন্য সহকর্মীরা আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে মোটরসাইকেল প্রতীকের ভাই ইমন ফরাজীর নেতৃত্বে অনেক লোক এসে আমাদের উপর হামলা চালায়। আমরা পুলিশের থেকে সাহায্য চাইলে তারাও আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
আহত আরেক সাংবাদিক বরকত মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের উপর যখন হামলা চালানো হয়, আমরা প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে বাঁচাতে অনুরোধ করেছিলাম তারা তখন সরে যায়। কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখলেই হামলাকারীরা মারধর শুরু করেছে। যায়যায়দিনের প্রতিনিধি ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের উপর যখন হামলা চালানো হয় প্রশাসন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে। হামলাকারীরা যখন আমাদের অবরুদ্ধ করে সন্ত্রাসী কায়দায় মারছিলো প্রশাসন তখন মজা নিচ্ছিলো। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার চাই। জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, এখানে বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিলো। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া একজনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, তার অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকায় পাঠানো হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নি কর্মকর্তা ও জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, আমরা খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। যারা আহত হয়েছেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com