গাজার সংঘাতে যুদ্ধে নারী এবং কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের নারী সংস্থার প্রধান। মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহাউস এ কথা জানান। তিনি বলেন, গাজায় গত সাত মাস ধরে চলা সংঘাতে ১০ হাজারের বেশি নারী প্রাণ হারিয়েছেন। রাফা শহরের নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা বিভিন্ন স্থানেও হামলা চালানো হচ্ছে। সেখানে একটি ছোট তাঁবুতে ঘুমন্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় বহু নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। এই ঘটনাকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বাহাউস বলেন, এই যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে কারণ নারী ও মেয়েরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
গাজায় আর কোনো স্থানই এখন নিরাপদ বলা যাচ্ছে না। যেসব এলাকা নিরাপদ ভেবে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিল সেসব স্থানেও হামলা চালানো হচ্ছে। রাফার পশ্চিমা লে নিরাপদ অ ল হিসেবে ঘোষিত একটি তাঁবুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জনই নারী এবং কিশোরী। গত কয়েকদিন ধরেই রাফার বিভিন্ন স্থানে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। এদিকে স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অপরদিকে রাফায় বিমান হামলা নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার অনুরোধে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের তা-বে ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৯৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৮১ হাজার ১৩৬ জন। অপরদিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৯। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজনকে জিম্মি হিসেবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই-কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে হামলার যেসব ছবি সামনে এসেছে, তা ভয়াবহ। ইসরায়েল যেভাবে যুদ্ধ করছে, তাতে প্রচুর সাধারণ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর রোববারের বিমান হামলা বুঝিয়ে দিয়েছে যে গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।
ভলকার তুর্ক আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রাফায় হামলা বন্ধের রায় দিলেও ইসরায়েল তা মানছে না। তাছাড়া ইসরায়েলের যুদ্ধ কৌশল ও পদ্ধতিতে এখনো তেমন কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। আমি ইসরায়েলকে আইসিজের নির্দেশ মেনে রাফায় আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।