রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
আমার কথা বলে চাঁদা-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করলে পুলিশে দিন : আসিফ নজরুল তিস্তার পানি দ্রুত বাড়ছে আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন মাহমুদুর রহমান ঢাকার খাল দিয়ে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার : পানিসম্পদ উপদেষ্টা শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ বরদাস্ত করা হবে না : মামুনুল হক নৌকা থাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন হতে পারে : উপদেষ্টা আদর্শিক ভিন্নতা থাকলেও সবাই একসঙ্গে জাতি গঠনে কাজ করবে: মঞ্জুরুল ইসলাম জাতিসংঘে ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা মাহমুদ আব্বাসের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের দাফন ছাত্র-জনতার অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয় স্বৈরাচার থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে

‘উপজেলা পরিষদ থেকে বিদায় নিলেও: রাজনীতি থেকে নয়’

হুমায়ুন কবির ঝিনাইদহ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪

কালীগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা পরিষদ থেকে বিদায় নিলেন। তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করলেও ৮ মে ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন নি। ওই নির্বাচনে উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন শিবলী নোমানী। ২৯ মে (বুধবার) বেলা ১২ টায় উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক সাধারণ সভায় কোন প্রকার আয়োজন ছাড়াই বিদায় নেন বর্ষীয়ান এই নেতা। এসময় নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যানগণ। আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ এবং উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। উপজেলা পরিষদ থেকে বিদায় নিলেও রাজনীতি থেকে এখনই বিদায় নিচ্ছেন না উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা। অত্র উপজেলার স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ পিরোজপুর গ্রামের এই কৃতি সন্তান সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ সালে। মৃত আব্দুল গনি শাহ ও মৃত রাবেয়া খাতুন দম্পতির সন্তান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু। ৫ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। ছোট থেকে চাষি গ্রেস্ত পরিবারে বেড়ে উঠলেও বড় ভাইদের মত লেখাপড়া শেখার প্রতি তার ছিল অন্যরকম আগ্রহ। তিনি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ পান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হন অর্থনীতি বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই তিনি ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগ শাখার সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে যোগ দেন জাতিসংঘের অন্যতম একটি সংগঠন “ইউনেস্কো’র” একটি প্রজেক্টে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-কে মন থেকে মেনে নিতে না পারায়,খুনিদের বিচারের দাবিতে হলেও রাজনীতিতে আসার ভাবনা সব সময় তাড়িত করতো জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডুকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে প্রত্যাবর্তন করলে তিনি পুনরায় সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। প্রথমদিকে ঢাকায় রাজনীতি করলেও পরবর্তীতে নিজ এলাকা বারোবাজারের নিরঞ্জন বাবু, আব্দুল জব্বার ও মালেক মাস্টারের অনুপ্রেরণায় স্থানীয়ভাবে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৮০ সাল থেকে দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার কখনো সভাপতি কখনোবা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হন তিনি ।এসময় তিনি জাতীয় পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুস সাত্তার মিয়ার নিকট মাত্র ১৫০ ভোটে পরাজিত হন। ১৯৯০ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মশিউর রহমানকে ৯ হাজার ভোটে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ বিলুপ্তি ঘোষণার পর ১৯৯১ সালে আবারো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত ঝিনাইদহ-৪ সংসদীয় আসনের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। এসময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শহিদুজ্জামান বেল্টুর নিকট প্রায় ৬ হাজার ভোটে পরাজিত হন। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নুরুল ইসলামকে প্রায় ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে পুনরায় উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে আবারো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। সত্তোর্ধ কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা বৈবাহিক জীবনের নিঃসন্তান ছিলেন। ২০২৪ সালের ২১ জানুয়ারি তার স্ত্রী দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জীবনের শেষ বেলায় এসে রাজনৈতিক কর্মকা- নিঃসঙ্গতাকে যেন গ্রাস করেছে। তার ধ্যান, জ্ঞান, চিন্তা-চেতনা সবকিছুতে মিশে গেছে রাজনীতি। দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রয়োজনে এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় তাকে রাজনীতির মাঠে অনাগত দিনগুলোর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি মনে করেন। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার এর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। সাংসদের আনুষ্ঠানিক মৃত্যুর ঘোষণা আসার সাথে সাথেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হবে কে হবেন পরবর্তী সংসদ সদস্য। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডুর সাথে রাজনীতির নানা দিক নিয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এসময় সম্প্রতি আলোচিত ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকান্ডের ঘটনাকে পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকা- হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। এ ধরনের হত্যাকা- রাজনীতিবিদদের জন্য অশনি সংকেত বলেও তিনি মনে করেন। এমপি আনার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,বর্তমানে কালিগঞ্জের মানুষের মনে শোকের আবহাওয়া বিরাজ করছে। আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এবং ছোট ভাই ছিল সংসদ সদস্য আনার। তার অপরিবর্তে তার পরিবার থেকে কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী না হলে তিনি অবশ্যই ঝিনাইদহ-৪ আসনে সংসদ সদস্য পদের জন্য মনোনয়ন চাইবেন। সংকটকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত দুই বারের ন্যায় তার উপর আস্থা রাখবেন বলেও তিনি বিশ্বাস করেন। একই সাথে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কালীগঞ্জে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে একসাথে কাজ করার।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com