গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ওষুিধগুন সম্পন্ন মাদ্রাজী ওলকচু চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ওলকচু চাষ করে কৃষক লাভের টাকা ঘরে তুলতে পারছেন। তাই কৃষকরা ওলকচু চাষে ঝুঁকছেন। প্রতি শতাংশে এ ওলকচু ১৬০ থেকে ১৬৫ কেজি ফলন দেয়। যার বাজার দর ৭ হাজার ৩শ’ থেকে ৭ হাজার ৫শ’ টাকা। প্রতি শতাংশে মাদ্রাজী ওলকচু উৎপাদন খরচ ৩ হাজার টাকা বাদে লাভ হয় ৪ হাজার ৩শ’ থেকে ৪ হাজার ৫শ’ টাকা।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, গত বছর কন্দাল ফসল উনয়ন প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর বোড়াশী গ্রামে ১৫টি প্রদর্শনীতে ৬৫ শতাংশ জমিতে মাদ্রাজী ওলকচুর চাষ হয়। গত অগস্টে এসব ওলকচু ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করা হয়। এ বছর সদর উপজেলার উত্তর বোড়াশী ও মানিকদাহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে অন্তত প্রায় ১ শ’ শতাংশ জমিতে মাদ্রাজী ওলকচুর আবাদ হয়েছে। ক্ষেতে ওলকচু ভালো দেখা যাচ্ছে। কৃষকরা ধারণা করছেন এবছরও ওলকচুর ভালো ফলন হবে। আগামী ২ মাস পর এসব ওলকচু তুলে বিক্রি করা হবে।
খাদ্যাভাসে পরিবর্তনের কারণে এখন মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কচু জাতীয় ফসলের সংযোজন আবশ্যক হয়ে পড়েছে । সেই সাথে নিরাপদ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করণের ওপর সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ও কন্দাল ফসল উনয়ন প্রকল্পের আওতায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাদ্রাজী জাতের ওলকচু চাষ বিষয়ে কৃষকের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরছেন। তাই কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে এ ফসল আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন,পুষ্টিগুণের দিক থেকে ওলকচুতে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, থায়ামিন, লোহা, আঁশ, নিকোটিনিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়া, ভিটামিন রয়েছে। তাই ওলকচু খেলে পেটের পীড়া, ফোঁড়া, হাঁপানি, গোদ, অর্শ, বাত, রক্তের ব্যাধি, প্লীহার স্ফীতি প্রভৃতি নিরাময় হয়। আর গাছের উপরের অংশ কানের ব্যথা, গলা ফুলা, ফুসকুড়ি, কলেরা, উদরাময়, পোকামাকড়ে কামড় ইত্যাদি অসুখ সারাতেও ব্যবহার হয়। ওষুধিগুন সম্পন্ন মাদ্রাজী ওলকচু চাষ করে কৃষক লাভবান হতে পারেন। পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণে মাদ্রাজী ওলকচু চমৎকার একটি ফসল।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কিঞ্জল নাগ বলেন, মাদ্রাজী ওলকচু প্রতি শতাংশে ২৩টি রোপণ করা যায়। ১১০ থেকে ১৭০ দিনে এ ওল কচুর ১টি গাছ থেকে ৫ থেকে ৬ কেজি ওলকচু পাওয়া যায়। সেই সাথে ওই গাছে অন্তত ৩ টি বীজ পাওয়া যায়। পাইকারী প্রতিকেজি ওলকচু ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। তাই লাভজনক ওলচাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে কৃষক। ওল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে অর্থকরী ফসলে রূপ নিতে পারে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ওল চাষের পাশাপাশি ওলের বীজ উৎপাদন করে আরও বেশি লাভের মুখ দেখতে পারেন কৃষকরা। ১ হাজার টাকা মণ ওলের বীজ বিক্রি হয়।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর বোড়াশী গ্রামের কৃষাণী সাধনা মন্ডল, বলেন, বাড়ির পতিত জমিতে ওল চাষ করা যায়। এতে তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বীজ, সার, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গত বছর মাদ্রাজী ওলকচু ২ শতাংশ পতিত জমিতে চাষ করি। উৎপাদিত ওল ১৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করি। খরচ বাদে এতে ৮ হাজার ৫০০ টাকা লাভ হয়েছে। এবছর ও শতাংশ জমিতে মাদ্রাজী ওলকচু চাষ করেছি। ক্ষেতে ওলকচু ভােেল দেখা যাচ্ছে। আশাকরছি এবছরও ওলকচুর ভালো ফলন হবে।
ওই গ্রামের কৃষাণী লিপি হীরা, শিখা হীরা, শিল্পী রায় বলেন, মাদ্রাজী ওল কচুর রং সাদা, এটি আঠালো। খেতে সুস্বাদু। দেশী ওলকচুর তুলনায় মাদ্রাজী ওলকচু দ্বিগুনেরও বেশি ফলন দেয়। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার মাদ্রাজী ওলকচু চাষে বিশেষ উৎসাহ দেন। তার উৎসাহে আমরা মাদ্রাজী জাতের ওলকচু গত চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি। তাই এ বছরও এ জাতের লাভজনক ওলকচুর চাষ করেছি।