হজ ইসলামের প স্তম্ভের অন্যতম। হজ মুমিন মুসলমানের জীবনের সাধ ও স্বপ্ন। আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের এক বিশেষ উসিলা। আপন রবের সামনে দাসত্ব প্রকাশের এক বিশেষ মুহূর্ত। এজন্য হজের মৌসুম এলে মুমিনের হৃদয়ে ব্যাকুলতা বেড়ে যায়। ঢেউ ওঠে আবেদনে ও প্রার্থনায়। চোখের কোণে জমে যায় বিন্দু বিন্দু অশ্রুকণা। কল্পনার জগতে বারবার সে ছুটে যায় কালো গিলাফে ঢাকা সুদূর মরু মক্কার মসজিদে হারামে ও স্বপ্নের শহর মদিনার সবুজ গম্বুজের মসজিদে নববীতে।
তখন তার চোখের সামনে একের পর এক দৃশ্য ভাসতে থাকে। অসংখ্য মানুষ ধবধবে সাদা ইহরাম পরে আছে। তওয়াফ চলছে। এখানে হাজরে আসওয়াদ। ওখানে মাকামে ইবরাহিম। সামনে মুলতাযাম। কোনো কোলাহল ও কলরব নেই। নেই নীরবতাও। শুধু মিনতি আর আকুতি। সম্বোধন আর আকুলতা। শান্ত আহাজারি আর উষ্ণ শ্বাস। এরই মধ্যে সে খুঁজে পায় নিজেকে। আর খুঁজে পায় তার বুকের ভেতরে লুকানো অশ্রুসিক্ত বাসনাকে।
হজ এটি যদিও আর্থিক সামর্থ্যবানের ইবাদত। তবে দৃঢ়সঙ্কল্প ও প্রস্তুতি থাকলে গরিবদের জন্যও সম্ভব। কিছু না হোক, সওয়াব তো পাবে। কেননা বান্দা যখন কোনো আমলের জন্য দৃঢ়সঙ্কল্প করে, কিন্তু ওজরের কারণে আমলটি করতে পারে না, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে সে আমলের সাওয়াব দান করেন। এক হাদিসে আছে, নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মন থেকে আল্লাহর কাছে শাহাদাতের তামান্না করে আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেন; যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।’ (মুসলিম-১৯০৯)
তাওহিদ ও রিসালাতের সাক্ষ্যদান তথা ঈমানের পর যে চার ফরজ ইবাদতকে ইসলামের ভিত্তি বলা হয়েছে হজ তার অন্যতম।
কুরআন মাজিদে সামর্থ্যবানদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার বিধান এসেছে খুবই গুরুত্বের সাথে । ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। আর যে এই নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি সামান্যও মুখাপেক্ষী নন।’ (সূরা আলে ইমরান-৯৭)
হাদিস বর্ণিত হয়েছে- হজরত আলী রা: বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার (খরচ বহনের) মতো ধন-সম্পদ ও বাহনের অধিকারী হওয়ার পরও যদি হজ না করে তবে সে ইহুদি হয়ে মারা যাক বা খ্রিষ্টান হয়ে মারা যাক তাতে (আল্লাহর) কোনো ভাবনা নেই।’ (তিরমিজি-৮১২)
সূরা বাকারার ওই আয়াত ও তিরমিজি শরিফের হাদিস দ্বারা স্পষ্টভাবে হজের গুরুত্ব এবং অবহেলা করার ভয়াবহতা বোঝা যাচ্ছে। কাজেই সামর্থ্যবান মুমিন নারী-পুরুষের কর্তব্য, এই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদতটি আদায় করে ফেলা। এ ব্যাপারে অযথা কালক্ষেপণ না করা। আর মকবুল হজের প্রতিদান হলো, নতুন পবিত্র জীবন।
হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, আমি নবী করিম সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।’ (বুখারি-১৫২১)
রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (সুনানে তিরমিজি-৮১১)। লেখক : শিক্ষক ও আলোচক