শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন

আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষে চমক

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪

আঠাবিহীন কাঁঠাল আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের যুবক মাহমুদুল হাসান সবুজ (৩৫)। কম খরচে বেশি ফলন পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তিনি। এমন সাফল্য দেখে স্থানীয় অনেক চাষি এই জাতের কাঁঠাল আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সবুজের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউটিউবে ভিডিও দেখে আঠা ছাড়া কাঁঠাল আবাদে উদ্বুদ্ধ হন। কিন্তু কোথাও চারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এ অবস্থায় এক বন্ধুর সহায়তায় প্রায় এক বছর আগে ভারত থেকে চারা আনেন। পরে বাড়ির চারপাশে নানা ধরনের ফলজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে ২৫টি চারা রোপণ করেন। এর মধ্যে একটিও মরেনি। সবগুলো গাছ বড় হয়েছে। সেগুলোতে এখন ফল ধরেছে। ইতোমধ্যে পাকা ফল খেয়েছেন।
রোপণের তিন মাসের মাথায় গাছে ফলন এসেছে জানিয়ে মাহমুদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি মূলত ভিয়েতনামের আঠাবিহীন কাঁঠালের জাত। বারো মাস ফল দেয়। এরই মধ্যে দুবার ফল দিয়েছে। যেগুলো পেকেছে সেগুলো নিজে খেয়েছি, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিয়েছি। ভেতরের কোষগুলো রসালো এবং খুব মিষ্টি। তবে কোনও আঠা নেই। দুই মাস আগে আরও ২০টি গাছ লাগিয়েছি। এর মধ্যে একটি মারা গেছে। বাকি ১৯টি বড় হয়েছে। আশা করছি, ৪৪টি গাছে ফল ধরলে বিক্রি করতে পারবো।’
আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষ দেখে অনেকে উৎসাহিত হয়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিচ্ছেন। বাগান দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছেন আশপাশের মানুষজন। নিচ্ছেন পরামর্শ। নিতে চাচ্ছেন চারা।
বাগান দেখতে আসা শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকার পোশাক কারখানায় স্টোর ম্যানেজার ফজলুল হক বলেন, ‘আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠালের বাগান ও পরিচর্যা দেখতে এসেছি। চারা সংগ্রহ ও পরিচর্যার নিয়মকানুন জেনেছি। আমি বাড়িতে রোপণ করবো। গাছগুলো ছোট অবস্থায় ফল ধরেছে। দেখতে সুন্দর লাগছে।’
হাজি ছোট কলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও মুলাইদ গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক বছর ধরে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠালের গাছগুলো পরিচর্যা করে আসছেন প্রতিবেশী সবুজ। এখন গাছে গাছে কাঁঠাল। কিছু ছোট অবস্থায় ঝরে পড়েছিল। দেখে বোঝা যাচ্ছে ফলন ভালো হয়েছে। আমাদের বাড়িতে বাপদাদার আমলে রোপণকৃত কাঁঠাল গাছগুলো এখন প্রায় ধংসের পথে। সবুজের বাগান দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই জাতের গাছ রোপণ করবো। এজন্য বাগান দেখতে এসেছি। তার পরামর্শ নিচ্ছি।’
দুদিন আগে বাগানটি দেখতে গেছেন শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেশিরভাগই গাছে কাঁঠাল ধরেছে। খেয়ে দেখেছি, খুব মিষ্টি। দ্রুত সময়ে কাছে ফলন আসায় চাষিরা লাভবান হবেন। চাষ ছড়িয়ে পড়লে একসময় রফতানি করা যাবে।’
নয়নপুর এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আতাউর রহমান সোহেল বলেন, ‘গাজীপুর কাঁঠালের জন্য পরিচিত। তবে মৌসুম ছাড়া পাওয়া যায় না। সবুজ বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল গাছ রোপণ করে সফলতা পেয়েছেন। আমাদের এলাকায় দ্রুত শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় দেশি কাঁঠালের গাছ কমে যাচ্ছে। এই থেকে উত্তরণের জন্য আমরা বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষ করে সমৃদ্ধ হতে পারবো।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশীয় জাতের কাঁঠালে প্রচুর আঠা থাকে। বছরে একবার ফলন দেয়। কিন্তু নতুন জাতের আঠাবিহীন কাঁঠালটি বারোমাস ফল দেয়। কৃষকরাও এটি চাষে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন। আমরাও তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।’
এদিকে, বারি কাঁঠাল-৬ নামে আঠাবিহীন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কাঁঠাল গবেষক ড. মো. জিল্লুর রহমান। তিনি দেশে কাঁঠাল চাষ সম্প্রসারণে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন অমৌসুমি জাতের কাঁঠালের জাত সংগ্রহ করে জাতটি উদ্ভাবন করে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই জাতের চারা রোপণের দেড় বছরেই ফল পাওয়া যাবে। বছরের বারো মাসই ধরবে। থাকবে না আঠা।
এ বিষয়ে ড. মো. জিল্লুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। এলাকাভেদে স্বাদের ভিন্নতা রয়েছে। বীজ থেকে চারা উৎপাদনে গুণাগুণ ঠিক থাকে না। তবে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করলে গুণাগুণ ঠিক থাকে। আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল উৎপাদন নিয়ে অনেক অবহেলা ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাহিদা বেড়েছে। কাঁঠাল ব্যবসা ঘিরে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় বারির ফলবিজ্ঞানীরা কাঁঠালের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। আগে পাঁচটি জাত উদ্ভাবন করেছি আমরা। সেগুলো হলো বারি কাঁঠাল-১, বারি কাঁঠাল-২, বারি কাঁঠাল-৩, বারি কাঁঠাল-৪ ও বারি কাঁঠাল-৫। সর্বশেষ বারি কাঁঠাল-৬ উদ্ভাবন করেছি। এই জাতের চারা রোপণের দেড় বছরেই পাওয়া যাবে ফল। বছরের বারা মাসই ধরবে। থাকবে না আঠা। কম খরচে লাভবান হবেন চাষিরা।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বারি কাঁঠাল-৬ চাষ করে অনেকে ভালো ফলন পাচ্ছেন। এই জাতের কাঁঠাল খুবই সুস্বাদু। উৎপাদনও ভালো হয়।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com