সীতাকুন্ডে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সবুজ বনায়ন। বর্ষার আগমণে সারি সারি গাছের চারায় সবুজ বিপ্লবের মনোরম দৃশ্য বেশ জমে উঠেছে। বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যানভাস সাজিয়েছে সবুজের সমারোহ। গাছে গাছে ফুল-ফল ও কলির গন্ধে ছড়িয়ে পড়েছে মনোরম সবুজের ঢেউ। এক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বদিকে তাকালে বড় বড় গাছে ঠাসা জঙ্গল চোখে পড়তো। তখন শিয়াল, বানর, হুনুমান, হরিণ, বন মোরগ, হাতি, চিতা ও মেছো বাঘসহ অসংখ্য প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিচরণ করতো। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটার ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের সেই জৌলুস। ঐতিহ্যের সেই বিশাল বৃক্ষরাজি অল্প সময়ের ব্যবধানে উজাড় হয়ে পরিনত হচ্ছে ন্যাড়া ভূমিতে। এদিকে “গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান” শান্তিতে বাচঁতে হলে প্রয়োজন সবুজের ছায়া, এ শ্লোগান’কে সামনে রেখে উপজেলায় দৃশ্যমান হচ্ছে নীরব সবুজ বিল্পব। সীতাকুন্ড পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড দক্ষিণ ইদিলপুরের বাসিন্দা প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, সীতাকুন্ডে বাড়ছে সবুজ বনায়ন। বৃক্ষ হতে উৎপাদিত ফল-মূল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বাংশে পাহাড়ি বনায়ন ও সড়কের দুরত্ব স্বল্প পরিসরের হওয়ায় দৃষ্টিনন্দন সবুজের এ ঢেউ পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কাছে বিনোদনের বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদিকে বাড়বকু-ের ন্যাড়া পাহাড়ে প্রায় ১৬৬ একর পাহাড়ি ঢালু ভূমিতে দৃশ্যমান হচ্ছে সবুজ বনায়নের মনোরম ঢেউ। এ বাগান পরিচর্যায় অসংখ্য লোকের প্রয়োজন হওয়ায় বাড়ছে ব্যাপক কর্মসংস্থান। ফলজ, বনজ, ঔষধি ও বিরল প্রজাতির সারি সারি বৃক্ষরাজিতে ন্যাড়া পাহাড়ে দেখা দিয়েছে সবুজের ঢেউ। সেখানে প্রায় ১০ হাজার আমগাছ ছাড়াও ফলজ বৃক্ষের মধ্যে জাম, কাঁঠাল, লিচু, ডালিম, বেল, পেঁপে, কুল, লেবু, তেঁতুল, জলপাই, জামরুল, পেয়ারা, মাল্টা, আপেল, আমড়া, কামরাঙ্গা ও আমলকি সহ নানান প্রজাতির ফলজ গাছ। মুরাদপুর ইউনিয়নস্থ ঢালীপাড়ার সামাজিক, মানবিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষক ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ নাসিমুল হুদা নওশাদ বলেন, ঐতিহ্যগত ভাবে সীতাকুন্ডের মানুষ বৃক্ষপ্রেমিক। বৃক্ষ ও ফুলের নামে রয়েছে উপজেলার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন বাশঁবাড়ীয়া, কলাবাড়ীয়া, জোড়া আমতল, তালতলী, নিমতলা, কড়ইতলী ও ফুলতলা‘সহ আরো কয়েকটি স্থান। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সবুজের ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষের রয়েছে অত্যাধিক গুরুত্ব। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপনে সকল‘কে এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। উপজেলার হাসনাবাদের বাসিন্দা ও শীতলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন বলেন, সরকারের নানান উদ্যোগ ও পরিবেশবাদীদের শত প্রচেষ্টায়ও থামানো যাচ্ছে না পাহাড় দখল, কর্তন কিংবা বৃক্ষ নিধন। উপজেলার উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পসহ জীব-বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি ভাবে বনায়নে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবারের বর্ষায় ব্যাপক পরিসরে ফলজ, বনজ, ঔষধি ও নান্দনিক বৃক্ষের চারা রোপনে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন তারা।