শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ অপরাহ্ন

কাশিয়ানীতে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে

তাইজুল ইসলাম টিটন (কাশিয়ানী) গোপালগঞ্জ
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪

মাছে ভাতে বাঙ্গলী প্রবাদটি চলে আসছে যুগ। শত বছরের পুরানো এই প্রবাদটি শুধু কথার কথাই না। এটা বাঙ্গলীর জীবনে সাথে মিলেমিশে একাকার। প্রবাদ বাক্যটি যেন মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সোজাসাপ্টা কথা হলো প্রতিদিনই খাবারে তালিকায় মাছ না থাকলে যেন পেট ভরে খাওয়া হয় না। অপূর্ণতা রয়ে যায়। প্রতি বেলায় খাওয়ার সাথে মাছ চাই চাই। মোট কথা এটা জীবন ধারণের একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে মাছের আধিক্য। শুধু মাছ হলেই চলে না চাই পছন্দসই মাছ। আর সেই পছন্দের তালিকায় প্রথমেই থাকে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বিশেষ করে গ্রাম বাংলায় আতিথীয়তায় দেশীয় মাছ না থাকলে যেন অসম্পূর্ণ থাকে অতিথি সেবা। দিন দিন সেই প্রথা বিলুপ্ত হতে চলেছে। হারিয়ে যাচ্ছে অর্ধশত দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। দিনদিন গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। বর্ষারশুরুতেই কাশিয়ানী উপজেলার বিভিন্ন নদী, খাল বিলে সরকারি ভাবে নিশিদ্ধ কারেন্ট জাল,ম্যাজিক জাল,সুতিজাল, ভেসাল,বেহুন্দী জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকারীরা বেপরয়া ভাবে মাছ শিকার করছে। বর্ষা শুরু সাথে সাথে মাছ ডিম ছাড়ার আগেই শিকারীদের জাল আটক হচ্ছে। ফলে দেশীয় মাছ তাদের বংশ বিস্তার করতে পারছে না। ফলে উপজেলা এলাকায় জলাশয়ে দেশীয় মাছ তাদের বংশ বিস্তার করতে পারছে না। দিন দিন দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। দ্রুতগতিতে কাশিয়ানী উপজেলা এলাকা দেশীয় মাছ শুন্য হয়ে পড়ছে।
এক সময়ের এই এলাকায় বোয়াল, শোল, গজার, কৈ, শিং, মাগুর, স্বরপুটি, ক্যালকে টাটকেনি, বাচা, গাইড়ো, বাশঁপাতা, মাগুর, রুই, কাতল, মৃগেল, টেংরা, পুটি, রয়না, গুইতে, বাইম, টাকি, খলসে, আইড় ,চিংড়ি, রিটা, বেলে, পাবদা, কালিবাউস,রঙিন বেতাগা, মলা ঢেলাসহ প্রায় অর্ধশর্ত প্রকার জনপ্রিয় দেশীয় মাছ এখন প্রায় বিল্প্তুর পথে। এর মধ্যে বাশঁপাতা,স্বপুটিঁ, বোয়াল, রিটা, পাবদা, রয়না, আইড় দেখা পাওয়াই সৌভাগের ব্যাপার। এলাকাবাসী জানায়, বর্ষার পানি আসার সাথে সাথেই অসাধু লোকজন সরকার নিশিদ্ধ ইলেক্ট্্িরক সর্ট, কারেন্ট জাল,ম্যাজিক জাল, ভেসাল, বেহুন্দী জাল, সুতিজালের অবাধ ব্যাবহার মাছের প্রজনন শেষ করে দেয় এবং এসব জাল দিয়ে ছোট ছোট মাছ ও মাছের ডিমসহ শিকার করে নেয়। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে পুকুর মালিকরা তাদের পুকুর একাধিক বার সেচ দিয়ে মাছ ধরে। আবার এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন সরকারি খালগুলি ক্ষমতা খাঁটিয়ে বিক্রি করাসহ অবৈধ্য ভাবে সেচ দিয়ে মাছ ধরে ফেলে। ফলে মাছের নতুন প্রজনন বাধা গ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে মাছের বংশ বৃদ্ধি বাধা গ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলার নদী খাল বিল বাওড়সহ বিভিন্ন জলাশলে বসবাসকারি মাছ ও শামুকসহ কোন প্রকার জলজ প্রাণী রক্ষা পাচ্ছে না। জলে বসবাসকারি সাপ,ব্যাঙ,পোকা-মাকড়, শামুক বিশেষ করে বেহুন্দী জাল ও ম্যাজিক জালে আটকে গিয়ে নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে। কিছইু ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। একদিকে সরকারি নিশিদ্ধ জালের অবাধ ব্যাবহার অন্যদিকে কৃষি জমিতে সার ও কিটনাশকের অবাধ ব্যাপক ব্যাবহারে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির দিকে ঢেলে দিচ্ছে। দেশীয় মাছ রক্ষা ও অবৈধ্য জাল ব্যাবহার বন্ধে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মু. রাসেদুজ্জামান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়েনের গ্রাম পুলিশকে (চৌকিদার) একত্রিত করে সমাবেশের মাধ্যমে অবৈধ্য জাল ধরতে নির্দ্দেশ দিয়েছেন। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে রাজপাট ও পারুলিয়া ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশদের অভিযান চোখে পড়ার মত।
অবৈধ্য জাল উচ্ছেদ অভিযান করার অপরাধে রাজপাট ইউনিয়নের জৈনক গ্রাম পুলিশের ছেলে জাল মালিকদের মারধরের স্বীকার হয়। উপজেলা মৎস্য অফিসার রাজীব রায় এবছরে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে (২০০০) দুই হাজারের বেশী ম্যাজিক জাল আটক ও ধ্বংশ করেছেন। এসব পদক্ষেপ নিলেও কোন প্রকার লাভ হচ্ছে না। দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলছে এ সব নিশিদ্ধ জালের ব্যাবহার। নিশিদ্ধ জালের অবাধ ব্যবহারের কথা স্বীকার করে উপজেলা মৎস্য অফিসার রাজীব রায় জানান,দেশীয় মাছ রক্ষার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মু. রাসেদুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রায়ই মোবাইল কর্োাট পরিচালনা করি। নিশিদ্ধ জাল ব্যাবহারকারিদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এদর নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com