রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
সরকারের কাছে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছি : জামায়াত আমির মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে হবে স্পেশাল লাউঞ্জ: আসিফ নজরুল শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে আস্থা নেই বাইডেনের বিশ্বের ১৩০টিরও বেশি দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে রাষ্ট্রপতির সাথে সেনাপ্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ গণঅভ্যুত্থান-বিপ্লবের মূল স্পিরিট ব্যাহতকারীদের সরানোর কথা বলেছি সড়কে ১৫ ঠিকাদারের রাজত্ব শ্রমিক অসন্তোষ দূর হলে আরও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবো : আহসান খান চৌধুরী শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন: রিজভী শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু

আসছে নতুন মুদ্রানীতি: সুদহার বাড়িয়েও অধরা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য অর্জন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪

আগামী ১৮ জুলাই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগে ১৬ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন মুদ্রানীতি অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুদ্রানীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বাজারে এমনভাবে অর্থের জোগান বাড়ানো-কমানো হয়, যাতে মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য। তবে দীর্ঘদিন ধরেই মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার এই দুই সূচকেই চরম অস্থিরতা চলছে। এ ছাড়া বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ঘাটতি ও রিজার্ভ নিয়েও অর্থনীতিতে চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানা গেছে, মূূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আগামী মুদ্রানীতির ভঙিমাও সংকোচনমূলক হবে। তবে নীতি সুদহার আর বাড়ানো হবে কি হবে না, সে সিদ্ধান্ত নিয়ে দোটানায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ নীতি সুদহার যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, বাজার সুদহার তার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে বেড়ে গেছে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে সুদহার না বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ খুব কাজে আসেনি। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তার ধারেকাছেও আসেনি। উল্টো পুরো অর্থবছরে গড়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে পৌনে ১০ শতাংশ। অন্যদিকে সংকটের কারণে ডলারের বিনিময় হারেও অস্থিরতা কাটেনি। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি বাগে আনার ক্ষেত্রে নীতি সুদহার আরও বাড়ানো হবে, নাকি আগের মতোই অপরিবর্তিত রাখা হবে, সে সিদ্ধান্ত নিয়ে দোটানায় রয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে নতুন মুদ্রানীতির কাঠামো প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ জুলাই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগে ১৬ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন মুদ্রানীতি অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া শুরু করেছি। বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ আসছে। এসব মতামতের ভিত্তিতে নতুন মুদ্রানীতি দেওয়া হবে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা থাকবে।
কয়েক বছর ধরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টরা জানান, সঠিক সময়ে সুদহার বৃদ্ধির উদ্যোগ না নেওয়ায় এখন তার কোনো সুফল মিলছে না। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সারা বিশ্বে যখন মূল্যস্ফীতি বাড়ছিল, তখন প্রায় সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। এতে করে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই সফল হয়। তবে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির দেখা মিললেও সেই সময় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ঋণের সুদহারে সীমারোপ করে রাখা হয়। তবে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে স্মার্ট পদ্ধতির আওতায় সুদহার বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ আইএমএফের চাপে গত মে মাস থেকে সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর ঋণের সুদহার ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। বর্তমানে ১৫-১৭ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। তারপরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেটির ধারেকাছে যেতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পুরো অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে প্রায় পৌনে ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯.৭২ শতাংশ। আগের মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৮৯ শতাংশ। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছরের সব মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে সর্বোচ্চ ৯.৯৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল গত অর্থবছরের অক্টোবর মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজারব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা না থাকলে সেটি প্রণয়ন কিংবা ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ নেই।
সম্প্রতি আইএমএফ ও অন্যান্য সংস্থার ঋণ এবং রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। তার পরও ডলার সংকট কাটছে না। ফলে দামেও রয়েছে অস্থিরতা। গত মাসে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে আইএমএফ নির্দেশিত ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি চালু করে। এতে ডলারের দাম এক লাফে ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়ে গেছে। ফলে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে। এ কারণে নতুন মুদ্রানীতিতে ডলারের দাম নতুন করে আর বাড়ানো নাও হতে পারে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com