সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অবাধে চলছে নিষিদ্ধ চায়না জাল বিক্রয় ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনে চলছে মহাৎসব। এতে মা মাছ ডিম দেওয়ার আগেই নিষিদ্ধ এ সব জালে ধরা পড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশিয় প্রজাতি মাছ। বর্ষার পানিতে নদী-নালা, খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট ছেয়ে গেছে চায়না জালে (রিং জাল), কারেন্ট জাল। আর এসব জাল দিয়ে প্রাকৃতিক উৎসে ডিম দিতে আসা মা ও পোনা মাছ নিধন করছেন স্থানীয়রা মৎস্য শিকারিরা। উপজেলার সর্বত্র বর্ষার পানিতে দেখা যাচ্ছে এই জাল। জালের মালিকরা বলছেন, এমন কোনো মাছ নেই যা এই জালে ধরা পড়ে না। উপজেলা মৎস্য অফিস বলছে, এই জাল সর্বনাশা। এটা বন্ধ করা হবে। উপজেলার মোহনপুর , উধুনিয়া, বাঙ্গালাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে নদী নালা, খালবিলে দেখা যায় সারি সারি চায়না জাল। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যেখানেই একটু পানি জমেছে সেখানেই এই জাল পাতা হচ্ছে। আর অবাধে ডিমওয়ালা দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস মাছের প্রজননকাল। চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না। যার ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পোনা মাছও ধরা পড়ছে এই জালে। এভাবে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছ ধরলে মাছের অভাব দেখা দেবে। নাদা গ্রামের হাফিজ বলেন, পানিতে যদি মাছ থাকে তবে চায়না জালে তা ধরা পড়বে। লোহার রডের সঙ্গে পেঁচিয়ে বিশেষভাবে তৈরি বর্গাকৃতির এই ঘন জালটি মাছের জন্য সর্বনাশা ফাঁদ। মাছ শিকারিরা বলেন, এই জালের দাম একটু বেশি হলেও পোষায়। এত মাছ অন্য কোনো জালে ধরা পড়ে না। ভোরে লাহিড়ী মোহনপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায় ,চায়না জাল দিয়ে ডিমওয়ালা মাছ ধরে বাজারে নিয়ে যাচ্ছিলেন মাছ শিকারিরা। এ ছাড়াও বাজারে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন ঝুড়িতে ছোট পোনা মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব মাছের অধিকাংশই ডিমওয়ালা। ডিমওয়ালা মাছ ধরা ঠিক কি না জানতে চাইলে বশির বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সংসার চালানোর জন্য মাছ ধরি। ভালো-মন্দ বুঝি না। স্থানীয়রা বলেন বর্ষায় নিচু এলাকার অনেক মানুষ কর্মহীন হওয়ায় এসব মাছ ধরা আরো বেড়েছে। খাদুলি গ্রামের ইয়াছিন বলেন, দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তিনি মাছের ব্যবসা করেন। মাছ কখন ডিম ছাড়ে এটি তিনি ভালো করে খেয়াল রাখেন। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে যে মাছ ধরতে হয় না তা তিনি মেনে চলেন। ইয়াছিন আলীকে চায়না জাল সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন, যারা প্রকৃতপক্ষে মাছের কারবার করেন কিংবা মাছ ধরা যাদের বংশগত পেশা, তারা কখনো এই জাল দিয়ে মাছ ধরবেন না। শুধু মৌসুমি শিকারিরাই এমন সর্বনাশা কাজ করতে পারেন। মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন চায়না জাল দিয়ে যেভাবে গুঁড়া মাছ ধরা হচ্ছে, তাতে শুষ্ক মৌসুমে মাছের তীব্র আকাল হবে। উল্লাপাড়ায় দ্রুত এই জাল নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। আরেক ব্যবসায়ী খাইরুল বলেন, এখন যারা চায়না জাল দিয়ে পোনা ও মা মাছ ধরে টাকা রোজগার করছে, তারাই একসময় আফসোস করবে। উপজেলার বিভিন্ন বাজার গুলোতে চায়না জাল (রিং জাল) ও কারেন্ট জাল বেচে কেনা হয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ি বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘর ভাড়া নিয়ে গোপনে চায়না জাল বিক্রি করছে বলে একাধিক জেলে জানিয়েছে। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চায়না জালের খুব চাহিদা। একটি চায়না জাল ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার পর্যন্ত বেঁচাকেনা হয় জালের মান অনুযায়ী। একজন ক্রেতা কমপক্ষে চল্লিশ থেকে ২০০ ফুট জাল ক্রয় করেন। এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আতাউর রহমান বলেন, চায়না জাল, কারেন্ট জালসহ যে জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরা হয় সেসব জাল আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। সর্বনাশা এই জাল বন্ধ করতে দ্রুত অভিযান শুরু করা হবে ও গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্য মাইকিং করা হবে।