ইহসান আরবি শব্দ। এর অর্থ সুন্দর, অনুগ্রহ, সদ্ব্যবহার, উত্তম কথা ও কাজ ইত্যাদি। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে ইহসান শব্দ দু’টি অর্থে ব্যবহার হয়েছে- ১. কাউকে উপকার পৌঁছানো। ২. প্রতিটি কাজ যথাযথ সুন্দর, সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পাদন করা। তবে দ্বিতীয় অর্থেই কুরআন ও হাদিসে ইহসান শব্দটি অধিক ব্যবহৃত হয়েছে।
ইহসান মৌলিকভাবে দুই প্রকার-
১. ইবাদতে ইহসান : ইবাদতের ইহসান সম্পর্কে হাদিসে জিবরাইলে ব্যাখ্যা এসেছে, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এমনভাবে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর তুমি তাঁকে না দেখলেও তিনি তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।’ (বুখারি-৫০)
২. দৈনন্দিন কাজকর্ম, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ইহসান : দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং পারিবারিক ও সামাজিক ব্যাপারে ইহসানের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু পছন্দ করো, অন্য লোকদের জন্যও তাই পছন্দ করো। আর যা তোমরা নিজেদের জন্য অপছন্দ করো, অন্যের জন্যও তা অপছন্দ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ-২২১৩০)
দৈনন্দিন কাজকর্ম, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ইহসানের কিছু দিক-
১. পিতা-মাতার প্রতি ইহসান : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না, মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করো।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৩)।
২. প্রতিবেশীর প্রতি ইহসান : রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে।’ (মুসলিম-৪৮)।
৩. অভাবী ও এতিমের প্রতি ইহসান : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করবে এবং আত্মীয়স্বজন, এতিম ও মিসকিনদের সাথেও।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-৮৩)।
৪. দুর্ব্যবহারকারীর প্রতি ইহসান : রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘তুমি তার সাথে সুসম্পর্ক জুড়ে চলো যে তোমার সাথে তা নষ্ট করতে চায়, তার প্রতি সদ্ব্যবহার করো যে তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং হক কথা বলো; যদিও তা নিজের বিরুদ্ধে হয়।’ (জামে সাগির-৪৯৮৭)।
৫. তর্ক-বির্তকের ক্ষেত্রে ইহসান : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘তুমি নিজ প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে আর (যদি কখনো বিতর্কের দরকার পড়ে, তবে) তাদের সাথে বিতর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’ (সূরা নাহল-১২৫)।
৬. অন্যান্য প্রাণীর প্রতি ইহসান : রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর উপর ইহসানকে অবধারিত করেছেন। অতএব তোমরা (হত্যার উপযুক্ত কাউকে) হত্যা করলে সুন্দরভাবে হত্যা করো এবং (কোনো পশু) জবাই করলে সুন্দরভাবে জবাই করো। জবাইকারী যেন তার ছুরি ধার করে নেয় এবং জবাইয়ের পশুকে শান্তি দেয়।’ (মুসলিম-১৯৫৫)। লেখক : শিক্ষক, বায়তুল আকরাম মাদরাসা, গাজীপুর