বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পানি কমতে শুরু করেছে এবং গতকাল রোববার দেশের উজানে ও অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, গোমতী, ফেনী, মুহুরী এই ৬টি নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিশেষ করে কুমিল্লার নিকটবর্তী গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গত শনিবার থেকে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চল ও ত্রিপুরা প্রদেশে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। এজন্য নদীগুলোর পানির স্তর ধীরে ধীরে নেমে আসছে। পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানির স্তর ক্রমেই নেমে আসছে। সেইসাথে ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা নদীর পানি নেমে আসায় ওইসব জেলার নি¤œাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টি কমে আসায় দেশে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো ১০ লাখ পরিবার পানিবন্দী। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্যায় দেশে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫ জন, কুমিল্লায় ৪ জন, নোয়াখালীতে ৩ জন, কক্সবাজারে ৩ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, ফেনীতে ১ জন ও লক্ষ্মীপুরে ১ জন মারা গেছেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধকোটির বেশি মানুষ: বন্যায় এখনো দেশের ১১টি জেলায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮। এখন পর্যন্ত বন্যায় ১৮ জনের মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। নিখোঁজ আছেন দুজন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ-সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে আজ রোববার এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বেলা তিনটায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রামে পাঁচজন, কুমিল্লায় চার, নোয়াখালীতে তিন, কক্সবাজারে তিন, ফেনীতে এক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ও লক্ষ্মীপুরে একজন। এ ছাড়া নিখোঁজ দুজন মৌলভীবাজারের। প্রতিবেদনে বলা হয়,জেলাগুলোতে ৩ হাজার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন ৪ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। উদ্ধার কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চিকিৎসা দল এবং অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফেনীতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের চিকিৎসকেরা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগের জন্য ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি ভি-স্যাট (ভেরি স্মল অ্যাপারচার টার্মিনাল) চালু করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।