লালমনিরহাটে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকের ফসলের মাঠের ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে। পানিতে ডুবে পচে গেছে রোপা আমন। আবার কারও ধান বালুর স্তূপে ঢেকে গেছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিস্তা পাড়ের হাজারো কৃষক। বন্যায় লালমনিরহাটের প্রায় ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তিস্তা অববাহিকার চরা ল ও নি¤œা ল পানিতে তলিয়ে শত শত হেক্টর জমির আমন ধান, চিনাবাদাম বীজতলা, আখ, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। বালুর স্তূপে ঢেকে ও পচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান। পাশাপাশি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি।
জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া, গরিবুল্লাপাড়া, কালমাটি, হরিণ চড়া, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, তাজপুর, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সিংগীমারী, সিন্দুনা ডাউয়াবাড়ি পাটিকাপাড়া এবং পাটগ্রাম উপজেলা দহগ্রামে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে বেশি। লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলায় ৯০ হাজার ২২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এতে ৮৮১ হেক্টর অর্থাৎ ৬৩.৭ হেক্টর আবাদি ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৯৫ লাখ টাকার। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১১০৪ জন কৃষক। কৃষি বিভাগ বলছে, এবার রবি মৌসুমের জন্য পাঁচ উপজেলার ১৯ হাজার ১০০ কৃষককে ৬টি ফসল প্রণোদনা দেওয়া হবে। এরমধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, সরিষা ও অড়হড়। হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনি গ্রামের কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পার্শ্ববর্তী জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলাম। ধান পাকা শুরু হবে এই মুহূর্তে হঠাৎ করে বন্যায় জমিতে বালুর স্তূপে ঢেকে গেছে। অনেক জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে কী খাবো দুশ্চিন্তায় আছি। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, রবি মৌসুম শুরু হয় ১৫ অক্টোবরের পর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলে। এ বছর লালমনিরহাট জেলায় ৬৫৬৫ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৯৩ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শাক-সবজি চাষাবাদ হয়েছে। ৪৫ হেক্টর নিমজ্জিত হয়ে প্রায় ২৭ হেক্টর ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, চলতি বন্যায় আমন ক্ষেতসহ অন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।