নিজের পছন্দনীয় জিনিস অন্যের জন্য বরাদ্দ করার নামই হলো স্বার্থ বিসর্জন। পূর্ণাঙ্গ ঈমানের দাবি হলো অন্য মুসলিম ভাইয়ের জন্য নিজের স্বার্থ ত্যাগ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ করো, মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে, তাহলে পূর্ণ মুসলিম হতে পারবে’। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৫)
এই হাদিসগুলোর মর্ম সাহাবিদের হৃদয়জগতে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল, ইতিহাসে তার নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করার পরে আনসারদের সঙ্গে মুহাজিরদের ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দেন। তখন মদিনার আনসারি সাহাবি সাদ বিন রাবি (রা.) আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.)-কে বলেছিলেন, ‘মদিনার আনসারদের মধ্যে আমি সর্বাধিক সম্পদের অধিকারী। আমি আমার সম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করে দেব। আমার দুজন স্ত্রী আছে, আপনার যাকে পছন্দ হয় বলুন, আমি তাকে তালাক দিয়ে দেব। ইদ্দত শেষে তাকে আপনি বিবাহ করবেন।’ ইবন আওফ (রা.) তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর জন্য বরকতের দোয়া করলেন এবং ব্যবসার পথ বেছে নিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭৮০; তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩৩)।
অনুরূপভাবে বাহরাইন এলাকা বিজিত হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) সেখানকার পতিত জমিগুলো আনসারদের অনুকূলে বরাদ্দ দিতে চাইলে তাঁরা আপত্তি করে বললেন, ‘আমাদের মুহাজির ভাইদের উক্ত পরিমাণ জমি দেওয়ার পর আমাদের দেবেন। তার আগে নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৭৬)।
আনসারদের এই অতুলনীয় স্বার্থ ত্যাগ ও মহত্ত্বের প্রশংসা করে আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন, ‘আর যারা মুহাজিরদের আগমনের আগে এ নগরীতে বসবাস করত এবং ঈমান এনেছিল। যারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং তাদের (ফাই বা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে) যা দেওয়া হয়েছে, তাতে তারা নিজেদের মনে কোনোরূপ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তাদেরই আছে অভাব। আসলে যারা হৃদয়ের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৯)। মহান আল্লাহ আমাদের স্বার্থ ত্যাগের সেই মহান গুণ অর্জনের তাওফিক দান করুন।