শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন

ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ার পরও ৬ বছরে শেষ হয়নি বারইপাড়া সেতুর নির্মাণ কাজ

গোলাম মোর্শেদ (কালিয়া) নড়াইল
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

সময় বেড়েছে তিন দফা, ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বদলেছে নকশা, বদলেছে ঠিকাদারও। তবুও যেন শেষ হচ্ছে না নড়াইলের কালিয়ায় নবগঙ্গা নদীর ওপর বারইপাড়া সেতুর নির্মাণকাজ। যদিও সড়ক বিভাগ বলছে, জটিলতা কাটিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, আগামী বছর জুনের মধ্যেই সেতু নির্মাণের বাকি কাজ শেষ হবে। তবে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও এ পথে চলাচলকারীদের ধারণা নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না। সেতু নির্মাণে ধীরগতি ও দীর্ঘসূত্রতায় ভোগান্তি যেমন চরমে, তেমনি সরকারের খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত ৬৩ কোটি টাকা।২০১৮ সালে শুরু হয়ে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে সাড়ে ছয় বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। সেতুর নকশা জটিলতায় ৭২ কোটি টাকার সেতুর নির্মাণ ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা।সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, সড়ক পথে নড়াইল সদরের সঙ্গে কালিয়া উপজেলাসহ, বাগেরহাট, খুলনা, গোপালগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে শুরু হয় নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া বারইপাড়া সেতুর নির্মাণকাজ। ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণে চুক্তি মূল্য প্রায় ৭২ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল অ্যান্ড মঈনুদ্দিন বাসী কনস্ট্রাকশন। প্রথম থেকেই অল্প শ্রমিক দিয়ে ধীর গতিতে কাজ শুরুর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে করোনার জন্য আরও পিছিয়ে পড়ে কাজ। এরপর ধরা পড়ে নকশা জটিলতা। থেমে যায় কাজ। পরে দুই দফা সময় বাড়িয়ে নদীর দুই তীরবর্তী অংশের সংযোগ সড়কসহ ১৫টি পায়ার এবং ১১টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হলেও মধ্যবর্তী অংশের ৩টি স্প্যান বসানোর কাজ এখনো বাকি। এর মধ্যে ২০২০ সালের ২০ জুন মাসে একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ওই ৯ নম্বর পিলারটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাল্কহেডের ধাক্কায় ৯ নম্বর পিলারটি নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার পর মূল অংশের ৪টি পায়ার ও ৩টি স্প্যান বসানোর কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ৬১ কোটি টাকায় সড়ক বিভাগ প্রথম মেয়াদের চুক্তি শেষ করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। পরে দ্বিতীয় মেয়াদে কংক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজিস্ট লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতুর বাকি অংশ নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, বিদেশ থেকে আমদানি করা ৮৬ দশমিক ৭৩ মিটার স্টিল আর্চ স্প্যানসহ আরও দুটি স্প্যান এবং বাড়তি পায়ারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। চাচুড়ি গ্রামের হাফেজ আব্দুল হাই ৩৫ বছর ধরে চাকরি করে কালিয়া পৌরসভার কুলসুর গ্রামের একটি মাদরাসায়। নদী পারের অপেক্ষায় আছেন। আক্ষেপের সুরে প্রবীণ এই শিক্ষক বলেন, কর্মজীবনের শুরু থেকেই এই ভোগান্তিতে আছি। কাজ শুরুর পর ভাবছিলাম আমাদের দুর্ভোগ কমবে, কিন্তু এখন তো দেখছি দুর্ভোগ আরও বাড়ছে! প্রতিবছর এই অর্ধেক সেতুর নিচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। আল্লাহ ভালো জানেন কবে এটা শেষ হবে। ইমরুল হোসেন নামের এক তরুণ সমাজসেবক বলেন, আমরা যারা এপারে (নড়াইল অংশে) বসবাস করি প্রয়োজনে কালিয়ার ওপারে যেতে পারি না। রাতে থানা বা হাসপাতালে যাওয়ার দরকার পড়লেও নদী পারাপারের উপায় থাকে না। উপজেলার সরকারি-বেসরকারি সব অফিস আদালত ওপারে থাকায় আমাদের সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হয়। ব্রিজটার কাজ দ্রুত শেষ হলে আমাদের যাতায়াতের ভোগান্তি শেষ হতো। জেলা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নবগঙ্গা নদীকে ‘সি’ গ্রেডের নদী হিসেবে আমাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠায়। পরে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নবগঙ্গা নদীর গ্রেড পরিবর্তন করে ‘বি’ গ্রেডের নদী হিসেবে প্রতিবেদন পাঠায়। পরবর্তীকালে তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী সেতুর নকশা পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে একনেক সভায় নকশা পরিবর্তন করে স্টিল স্প্যান বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ২০২৫ সালের জুন মাসে নির্দিষ্ট মেয়াদে সেতুর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com