বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন

আল্লাহর জন্য অর্থসম্পদ খরচ করা

মীযান মুহাম্মদ হাসান:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

অর্থসম্পদ সঞ্চয় করা আমাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি তেমনি অর্থসম্পদের সাথে সন্তান-সন্ততিও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রয়োজনে, বিপদাপদ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে; অর্থসম্পদ ও সন্তানের প্রয়োজন অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অন্তত বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়ার পর, প্রত্যেকেরই চাওয়া থাকে সঞ্চিত অর্থসম্পদ কাজে আসবে। সন্তান তথা ছেলেমেয়েরা দেখাশোনা ও সেবাযতœ করবে। খোঁজখবর রাখবে ইত্যাদি। কিন্তু যদি এসব পুরোটাই বিপরীত হয়, তখন কী হবে উপায়?
উদাহরণস্বরূপ, আমি সারা জীবন আমার রক্ত-মাংস পানি করে, ঘাম ঝরিয়ে অঢেল অর্থসম্পদ সঞ্চয় করলাম। নিজের সারা জীবনের কষ্টে উপার্জন করা টাকা-পয়সা ভালো কাজে খরচের আগেই আমার মৃত্যু হয়ে গেল। এমনকি নিজের অনেক প্রয়োজন পূরণ করাও এখনো বাকি। কিংবা সারা জীবন সরকারি চাকরি করে পেনশনের টাকা জমানো অবস্থায় আমার বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেল। তখন কী হবে উপায়? আমার এই কষ্টার্জিত অর্থসম্পদ কি আমার কোনো কাজে আসবে?
আমাদের ছেড়ে যারা পরকালের যাত্রায় শরিক হয়েছেন আমাদেরই চোখের সামনে তারা কি কেউ কখনো কোনো সময় তাদের এই সঞ্চিত অর্থসম্পদ সাথে নিয়ে গেছেন? কোনো জায়গায় এমন কোনো উপমা আছে? এমন কোনো দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোথাও নেই!
একইভাবে মনে করুন, ছেলেমেয়েরা স্বাবলম্বী হয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় নাগরিকত্ব লাভ করেছে। তারা আর দেশে ফিরে আসবে না। আসার কোনো দরকার ও সম্ভাবনা নেই বলা যায়। তবে বার্ধক্যকালে কোথায় হবে আমার আশ্রয়? আমরা কি কখনো এসব নিয়ে ভেবেছি? অথচ অর্থসম্পদ ও সন্তান সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারলে; এগুলো কখনো কারো কোনো কাজে আসে না। এটিই বাস্তব কথা।
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন। যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়। তিন প্রকার আমল ব্যতীত (অর্থাৎ, যেগুলো বাকি থাকে) ১. দানসদকা, যা চলমান থাকে; ২. ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য কোনো লোক উপকৃত হয়; ৩. নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। (অথবা ভালো যেকোনো জনকল্যাণমূলক কাজ করে, মা-বাবার জন্য পুণ্যের আশা করে (সুনানে নাসায়ি)।
কাজেই এমন কিছু দানসদকা করা, যা মৃত্যুর পরে কাজে আসবে যেমন-মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণ করা ও জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ খরচ করা। আর আমাদের প্রত্যেকের জন্যই অন্তত এমন একটি সন্তান রেখে যাওয়া জরুরি যে আমাদের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করবে। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাবে। আমাদেরকে স্মরণ করে, ভালো কাজ করবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘যে রিজিক (অর্থসম্পদ) আমি তোমাদের দিয়েছি। তোমরা তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করো। তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগেই।’ অন্যথায় (মৃত্যু এসে গেলে) সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে আরো কিছুকালের অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি দানসদকা করতাম। আর সৎকর্মশীলদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতাম’ (সূরা মুনাফিকুন-১০)।
উল্লিখিত আয়াত ও সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যায় তাফসিরে ইবনে কাসিরে এসেছে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় মুমিন বান্দাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন খুব বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করেন এবং লোকদের সতর্ক করছেন যে, তারা যেন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে না যায়। এরপর যারা আল্লাহর স্মরণে উদাসীন হবে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত। লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com