কোনো বড় মানুষের কর্মকা- সম্পর্কে অবগত হতে হলে তাকে চিনতে হয়, জানতে হয়; এরপর তার প্রতি আবেগ-অনুভূতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। কিন্তু এখানে যার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে তিনি কোনো মানুষ নন; তিনি হলেন মানুষের স্রষ্টা মহীয়ান গরিয়ান প্রতিপালক সর্বদ্রষ্টা সর্বশ্রোতা সর্বশক্তিমান সবচেয়ে বড় পরম দয়ালু দাতা একান্ত আপন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নেককার-মুমিনের মূল গন্তব্য জান্নাতের অনেক নাজনিয়ামতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পাশাপাশি পাপী ও অবিশ্বাসীদের জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিকু-ের কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তাই আল্লাহ তায়ালাকে জানতে হবে, চিনতে হবে সর্বোপরি দ্ব্যর্থহীনভাবে মাবুদ হিসেবে একমাত্র তাঁকেই মানতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা অবিশ্বাসীদের সতর্ক করেছেন কুরআনুল কারিমের মাধ্যমে। আর যারা (আমার বিধান) অস্বীকার করবে এবং আমার আয়াতগুলো মিথ্যা প্রতিপন্ন (করে লাগামহীন জীবনযাপন) করবে, তারা জাহান্নামের বাসিন্দা হবে, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে।
হে বনি ইসরাঈল (জাতি), তোমাদের ওপর আমি যেসব নিয়ামত দিয়েছি তোমরা সেগুলো স্মরণ করো, আমার (আনুগত্যের) প্রতিশ্রুতি তোমরা পূর্ণ করো, আমিও (এর বিনিময়ে) তোমাদের (দুনিয়া ও আখিরাতের পুরস্কারের) প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করব এবং তোমরা একমাত্র আমাকেই ভয় করো ।
আমি (মুহাম্মদের কাছে) যা (কুরআন) নাজিল করেছি, তোমরা এর ওপর ঈমান আনো, যা কিছু তোমাদের কাছে আছে এটি তার সত্যয়নকারী, তোমরা কিছুতেই এর প্রথম অস্বীকারকারী হইও না এবং (বৈষয়িক স্বার্থে) সামান্য মূল্যে আমার আয়াত বিক্রি করো না এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো (সূরা বাকারাহ : ৩৯-৪১)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে যারা ভয় করে তাদের উদ্দেশে উল্লিখিত সূরার ৪৩, ৪৪ ও ৪৫ নম্বর আয়াতে বলেন- ‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, জাকাত আদায় করো, যারা আমার সামনে অবনত হয় তাদের সাথে মিলে তোমরাও আমার আনুগত্য স্বীকার করো। তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের আদেশ করো এবং নিজেদের (জীবনে তা বাস্তবায়নের) কথা ভুলে যাও, অথচ তোমরা সবাই আল্লাহর কিতাব পড়ো; কিন্তু (কিতাবের এ কথাটি) তোমরা কি বোঝো না?
(হে ঈমানদার ব্যক্তিরা!) তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও; (যাবতীয় হক আদায় করে) নামাজ প্রতিষ্ঠা করা (অবশ্যই এটি) কঠিন কাজ; কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের কথা আলাদা।’ কুরআন মাজিদে আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁকে চেনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে আকাশমালা ও জমিনে ঈমানদারদের জন্য (আল্লাহ তায়ালাকে জানার অগণিত) নিদর্শন রয়েছে; (সূরা আল-জাসিয়া-৩)।
বিশাল আসমানগুলো ও বিস্তীর্ণ জমিনে আল্লাহর পরিচয় ব্যাপ্ত হয়ে আছে। এতসব দেখেও নির্বোধরা বিতর্কে লিপ্ত হয়। কুরআনুল কারিমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আল্লাহ তায়ালার ক্রোধের শিকারে পরিণত হয় তারা।
আল্লাহ জাল্লা শানুহু কুরআন মাজিদে বলেন- ‘আল্লাহ তায়ালার আয়াত যখন তার প্রতি তিলাওয়াত করা হয় তখন সে (তা) শোনে, (কিন্তু) একটু পরেই অহঙ্কারী হয়ে এমনভাবে জেদ ধরে যেন সে তা শুনতেই পায়নি, সুতরাং (যে এমন ধরনের আচরণ করে) তুমি তাকে এক কঠিন আজাবের সুসংবাদ দাও!
যখন সে আমার আয়াতগুলোর কোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে, তখন সে একে পরিহাসের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে; এমন ধরনের লোকের জন্য অপমানজনক আজাব রয়েছে (সূরা আল-জাসিয়া : ৮-৯)।
আল্লাহ তায়ালার আজাব ও গজব থেকে বাঁচতে হলে তাঁর হুকুম-আহকাম ঠিক সেভাবেই মানতে হবে যেভাবে আল্লাহর হাবিব সা: এবং তার সাহাবায়ে কেরাম পালন করে তামাম দুনিয়ার জন্য আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-‘হে ঈমানদার মানুষ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, আনুগত্য করো (তাঁর) রাসূলের এবং সেসব লোকের, যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত, এরপর কোনো ব্যাপারে তোমরা যদি একে-অপরের সাথে মতবিরোধ করো, তাহলে সে বিষয়টি (ফয়সালার জন্য) আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর ওপর এবং শেষ বিচার দিনের ওপর ঈমান এনে থাকো! (তাহলে) এ পদ্ধতিই হবে (তোমাদের বিরোধ মীমাংসার) সর্বোৎকৃষ্ট উপায় এবং বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাখ্যার দিক থেকেও (এটি) হচ্ছে উত্তম পন্থা’ (সূর আন-নিসা-৫৯)।
আল্লাহ জাল্লা শানুহু কুরআনুল কারিমে তাঁর হাবিবের অনুকরণ-অনুসরণের তাগিদ দিয়েছেন। এর ব্যত্যয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মনে রাখতে হবে, বিদয়াতের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই; বরং তা পরিহার করাই মুমিনের কর্তব্য; অন্যথায় সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে হজরত আয়েশা রা: থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারি-২৬৬৭)।
মানুষকে সৎপথে ডাকা অর্থাৎ কুরআন-হাদিসের আলোকে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেয়া ও নিজে তা পালন করা মুমিনের মূল্যবান ইবাদত। আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অন্য দিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না’ (আবু দাউদ-৪৬০৯)। লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক